কলকাতা: ‘ভাত খেয়ে প্লেট ধুয়ে রাখবে! আর ২টো ঘরও একটু মুছে দেবে!’, খানিক বিরক্তির সুরেই কসবার সুমন বাবুকে বললেন তাঁর স্ত্রী শ্রীময়ী সরকার। কসবার এই সরকার দম্পতিই শুধু নন, পরিচারিকার অনুপস্থিতিতে শনিবার শহরজুড়ে বেশিরভাগ বাড়িতেই এই একই ছবি। সৌজন্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন।
শহরে ভোট নেই। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের সরাসরি প্রভাব পড়ছে অধিকাংশ গৃহস্থ বাড়িতে। সপ্তাহান্তে শনিবার ভোট৷ তার সঙ্গে রবিবারটা ‘ফাউ’৷ শুধুই কি একদিনের জন্য বাড়ি যাব? রবিবারটাও কাটিয়ে আসব ক্ষণ! এটাই মোদ্দা কথা বেশির ভাগ পরিচারিকাদের৷ কর্মসূত্রে অনেকেই বাড়ি থেকে দূরে থাকেন৷ ভোটের এই হঠাৎ ছুটি পেয়ে খুশি সকলেই৷
কিন্তু, পরিচারিকাদের এই ছুটিতেই নাজেহাল অবস্থা গৃহকর্তা থেকে কর্ত্রীর৷ সরকারি-বেসরকারি কর্মীদের ভোটের জন্য ছুটি থাকলেও বহু বেসরকারি সংস্থায় আজ কাজও হচ্ছে৷ অফিসে বেরতে হয়েছে তাঁদের৷ তাই রান্না থেকে ঘরকন্নার কাজ, করবে কে?
এই শনি এবং রবিবার প্রায় ঘোষিত ছুটি নিয়েছেন পরিচারক-পরিচারিকাদের একাংশ। রান্না করা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা, বাসন মাজার মতো ঘরের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করার মতো কেউ নেই৷ অনুপস্থিত থাকবেন বলে সপ্তাহ খানেক আগেই বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন সিংহভাগ বাড়ির পরিচারকেরা।
‘ভোট দিতে যেতে হবে, শনি রবি আসব না’, সরাসরি বৌদিকে জানিয়ে দিয়েছেন শিপ্রা! কিন্তু ভোট তো শনিবার, রবিবার কিসের ছুটি? রবিবার ছুটির দিনে বাস বেশি চলবে না! তাই ক্যানিং থেকে ফেরা মুশকিল! একদম সোজা জানিয়ে দিয়েছিলেন শিপ্রা।
ভোটের উত্তাপ যখন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোয়, গেরস্থ বাড়িতেও পরিচারিকার অভাবে কার্যত একই অবস্থা। শুধু বাড়ির পরিচারিকারাই নন, ভোটের জন্যে বন্ধ বহু রেস্তোরাঁও। শ্যামবাজারের দত্ত দম্পতি, দু’জনই সেক্টর ফাইভে আইটি কর্মী। সাধারণত সারা সপ্তাহ অফিসের কাজ মিটিয়ে শনিবার আর রবিবার ছুটির দিনে বাড়িতে খানিক অলস ভাবেই কাটান। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য অনুপস্থিত তাঁদের বাড়ির পরিচারিকা শীলা। আর তাতেই অতি সমস্যায় পড়েছেন এই দম্পতি।
আইটি কর্মী গৌতম দত্ত জানাচ্ছেন, ‘‘আজ বাড়িতে রান্না না করার পরিকল্পনা ছিল, পুরোটাই অ্যাপ নির্ভর খাবারের দোকানের উপর নির্ভর করেছিলাম, কিন্তু সেখানেও বহু রেস্তোরাঁ বন্ধ! কারণ, সেখানকার কর্মীরাও বাড়ি গেছেন ভোট দিতে। বাড়িতেই অবশেষে সিদ্ধ ভাত খেয়ে কাটাতে হল।’’
এরকমই বহু মানুষ প্রত্যেকদিন সকালে গ্রামাঞ্চল থেকে এসে পরিচারিকা থেকে রান্নার কাজ করেন। রাত হলেই ফিরে যান। অথবা শহরের এক চিলতে ঘরে থাকেন। আর পঞ্চেয়েত ভোট মানেই অংশ গ্রহণ করা অধিকার। তাই শনিবার কার্যত নিজের কাজ নিজেদেরই সামলাতে হল গৃহকর্ত্রীদের।