‘পা ছোঁয়া নয়, বিরাট হওয়ার স্বপ্ন দেখো!’



স্বপ্নটা বিরাটের পা ছোঁয়ার জন্য কেন! স্বপ্ন হোক বিরাটের মতো হওয়ার!রবিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) এজলাসে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো বছর আঠেরোর এক তরুণকে এমনই পরামর্শ দিলেন বিচারক।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা ঋতুপর্ণ পাখিরা এ বারই উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। আর পাঁচজনের মতোই বিরাট কোহলির ফ্যান। তবে শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ চলাকালীন সে যে পুলিশের নিরাপত্তা বলয় টপকে স্টেডিয়ামে ঢুকে একেবারে বিরাটের পা জড়িয়ে ধরবে, তা ভেবেই উঠতে পারেননি কেউ।আর এই ‘অপরাধে’ই তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। রবিবার তাকে সিজেএম আদালতে তোলা হয়। বিচারক বিজয়িতা দে-র উদ্দেশে ঋতুপর্ণ বলে, ‘আমি বিরাটের ফ্যান। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল, বিরাট কোহলির পা ছোঁয়ার।’ তখন বিচারক তাকে থামিয়ে বলেন, ‘এটা কারও স্বপ্ন হতে পারে না! বরং তুমি বিরাটের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখো। চেষ্টা করো!’ যদিও এ দিন তাকে জামিন দেয়নি আদালত। সরকারি কৌঁসুলির আবেদনের ভিত্তিতে একদিনের জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

শনিবার ইডেনে চার–ছক্কা হাঁকিয়ে সবে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন কিং-কোহলি। ব্যাট হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে চেনা মেজাজে। স্টেডিয়াম জুড়ে তখন একটাই স্লোগান— ‘বিরাট... বিরাট’। তখনই পুলিশের নজর এড়িয়ে মাঠের ফেন্সিং টপকে ভিতরে ঢুকে পড়ে ঋতুপর্ণ। পুলিশ ও স্টেডিয়ামের নিরাপত্তারক্ষীরা তার পিছু ছুটলেও মাঠে ঢুকে ততক্ষণে ‘গুরু’র পায়ে সটান ডাইভ ভক্তের। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে ময়দান থানার পুলিশ।

পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছিল ঋতুপর্ণ। ইডেনের গ্যালারির ‘জি’ ব্লক থেকে ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে সে। এই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে। সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া, অপরাধমূলক অনুপ্রবেশ এবং অন্যের জীবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার ধারায় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এ দিন ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিজয়িতা দে–র এজলাসে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ‘ওই অভিযুক্ত বিরাট কোহলিকে বিরক্ত করেছেন।’

বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘আপনি যে বলছেন, বিরাটকে উনি অপ্রস্তুত করেছেন, সেটা কোথায় লেখা আছে? বিরাটের নাম কোথায়?’ সরকারি কৌঁসুলির জবাব, ‘ভিডিয়োতে আছে।’ বিচারক বলেন, ‘সেটা কি সিজ় করেছেন আপনারা?’ সরকারি কৌঁসুলির উত্তর, ‘হ্যাঁ। অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া দরকার। অনেকের নাম উঠে আসছে। বন্ধুরা উসকানি দিয়েছিলেন। অন্যরা ওকে দেখে একই কাজ করতে পারেন। কী ঘটতে পারত, কেউ জানে না। খেলোয়াড়দের জীবনের ঝুঁকি হতে পারে!’অভিযুক্তের আইনজীবীর পাল্টা সওয়াল, ‘এটা জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। ক্রিমিনাল ফোর্স অ্যাপ্লাইয়ের কথা বলা হয়েছে। কাউকে কোনও রকম ধাক্কা দেয়নি আমার মক্কেল।’ সওয়াল–জবাব শুনে বিচারক মন্তব্য করেন, ‘আমরা পুলিশ-জেল হেফাজত নিয়ে আলোচনা করছি। ওর (ঋতুপর্ণ) মুখ দেখুন— ও খুশি, ও যা করেছে তাতে।’ তখনই তিনি ঋতুপর্ণের কাছে জানতে চান, কেন সে এ রকম করল! এ দিকে এই গ্রেপ্তারির ঘটনায় সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘পুরোটাই পুলিশের ব্যাপার। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের তো কিছু করার নেই।’

Post a Comment

Previous Post Next Post