কলকাতা শহরে মধ্যরাতে কেউ আচার বিক্রি করতে পারে, ভাবতে পারেন? সারা শহর কখন নিয়ন আলোর আভায় ঘুমিয়ে, তখন একটি মানুষ কাঁধে করে বিক্রি করে চলেছেন বাড়িতে বানানো আচার। সারাদিন ঘুরে ঘুরে তখন শহর কলকাতায় আঁধার ঘনিয়েছে। প্রিয়া সিনেমার বাইরে তখন দাঁড়িয়ে রয়েছেন শিলাজিৎ। তারপর?
তিনি নিজের সমাজসেবামূলক কাজের জন্যও শিরোনামে থাকেন। এবারও ব্যতিক্রম হল না। একজন মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে এতটা অনুপ্রেরণা দেবেন যেন ভাবতে পারেননি শিলাজিৎ। আচার নেবেন? মাঝরাতে এসে এমন একজন যদি কাউকে বলেন আচার নেওয়ার কথা, অবাক হতে হয়। শিলাজিৎ নিজেও পড়েছিলেন সেই দলে। এমন একজন মানুষ নিজের দিনের রাতের ঘুম উড়িয়ে শুধুমাত্র খেটে চলেছেন সংসারের জন্য। শিলাজিৎ বললেন…
“খুব ডাউন লাগছে? শোন তাহলে। রাত পৌনে বারোটা, গিয়েছিলাম বহুদিন বাদে একটা পার্টি তে। ভক্তের জন্মদিন। প্রিয়া সিনেমার বাইরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ উদয় হলেন এই ভদ্রলোক।নাম রাজু। এ শহরে অনেক কিছুই হয়।হতে থাকে।যা নিয়ন আলোতেও পান্ডুর ,দিনের বেলাতেও ফ্যাকাশে আউট অফ ফোকাস।খুব মন খারাপ হয়।নিজেদের কাজের মূল্য পাইনা বলে মন্ত্রীরা ও দুঃখ করে আমি তুই কে হরিদাস। আমরাও করি। এই মানুষ টা মধ্যরাতে প্রিয়া সিনেমা হল এর বাইরে আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন অল্প হাসি মুখে। বললেন, ‘আচার নেবেন ভালো বাড়ির তৈরি আচার আছে। ‘আচার???মধ্যরাতে এ কোলকাতায় ব্ল্যাক e মদ বিক্রি হতেই পারে বা অন্য কিছু। কিন্তু আচার। আমি খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। ভাবলাম যা বলেও ফেললাম। জিজ্ঞাসা করে ফেললাম আপনি এই মাঝ রাতে এটা ভাবলেন যে একটা মানুষ সিনেমা হল এর বাইরে নিভে যাওয়া একটা শহরে আপনার কাছ থেকে আচার কিনতে পারে। আপনি এটা ভাবলেন কিভাবে? হাসি মুখে বললেন দুটো মেয়ে আছে ক্লাস সেভেন আর নাইন,তাদের পড়াশোনা। সংসার খরচ।চালাতে হয় তো। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরতে মাঝরাত হয়ে যায়।আমি লঙ্কা আর রসুনের আচার কিনলাম দু শিশি।”
সংসারের দায়িত্ব কাঁধে থাকলে বোধহয় এমনই হয় মানুষ। দিন রাতের ঠিক থাকে না। তবে, একথা ঠিক শিলাজিৎ আপ্লুত এমন মানুষের দেখা পেয়ে। বললেন, “উনি যদি এভাবে ভাবতে পারেন,উনি যদি হাসি মুখে রাতের ব্যবসার মধ্যে আচার কে বেছে নিয়ে সেটা বিক্রি করার জন্য রাস্তা পেরোতে পারেন।তাহলে আমিও পারবো। রাজু ভাই আপনি আমার থেকে অনেক টাই বয়সে ছোট হবেন,আপনি আমাকে অনুপ্রাণিত করলেন।এর জন্য আপনাকে পোস্টার লিখতে হবেনা। কোনো দলিল লাগবে না।আমার ভেতরে লড়বার দম টা বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন আপনি। আপনার মানসিকতা আমার মধ্যে ভর করুক। ভর করুক আমার ভক্তদের মধ্যে বন্ধুদের মধ্যে, আত্মীয় দের মধ্যে,তাহলে না পাওয়ার গল্প বলে জীবন নষ্ট না করে আমরাও লড়তে শিখবো।”
এই শহরে আজও আলো নিভে যায় নি। আজও মানুষ বেচেঁ আছেন নিজের মতো করে। কলকাতায় আজও গল্প তৈরি হয়। এ শহর কাউকে হারতে দেয় না। শিলাজিৎ আবারও বুঝিয়ে দিলেন সবকিছুই সম্ভব, শুধুই থাকতে হবে মনের জোর।