খাঁচায় ভরা টোপের ছাগলে মন নেই তার। কিন্তু জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম থেকে চরতে আসা ছাগল মেরেই প্রাক–বড়দিন সেলিব্রেট করল জ়িনাত!
২০ ডিসেম্বর পড়শি ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল পেরিয়ে ঝাড়গ্রাম দিয়ে বাংলায় ঢুকেছিল সিমলিপালের বাঘিনি। তার পর গত পাঁচ দিনে বাংলায় এটাই তার প্রথম শিকার। তবে শুধু একটি ছাগল মেরে তার অর্ধেকটা তুলে নিয়ে গিয়েই থামেনি জ়িনাত। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের যে রাইকার জঙ্গলে সে গত দু’তিন দিন ধরে রয়েছে, তারই দেড় কিলোমিটার দূরে, আদিবাসী গ্রাম সংলগ্ন ভাঁড়ারির জঙ্গলে আরও তিন–চারটি ছাগলের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।
সব ক’টিই জ়িনাতের শিকার বলে সন্দেহ করছেন বনাধিকারিকেরা। তবে শিকার করেও তাদের মুখে তুলে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে যায়নি সে। মানবাজারের বনাধিকারিক বিনয় মাহাতো জানিয়েছেন, ছাগলগুলির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট হবে, বাঘের কামড় বা থাবাতেই ছাগলগুলো মারা গিয়েছে কি না। জ়িনাতের গতিবিধি বুঝতে এলাকায় বসানো হয়েছে ছ'টিস্মার্ট ক্যামেরাও।
আতঙ্ক ছড়িয়েছে আদিবাসী গ্রামে। এলাকার বাসিন্দা বাসন্তী টুডুর কথায়, ‘রাইকার জঙ্গলের বাঘ এ দিকে চলে এসেছে জানার পরে ভয়ে আছি। মঙ্গলবার সকালে ১০টা নাগাদ আর পাঁচটা দিনের মতোই ছাগলগুলোকে পাতা খাওয়ার জন্য জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেগুলো দুপুর পর্যন্ত না–ফেরার পরে জানা যায়, ওদের বাঘে মেরেছে!’ আরেক বাসিন্দা মিথিলা বাস্কে বলছেন, ‘সোমবারও জঙ্গলে গিয়ে ছাগল না–ফেরার ঘটনা ঘটেছে। এ দিন তো মরা ছাগল পাওয়াই গেল। বাঘ যে এর পর গ্রামে ঢুকবে না, কে বলতে পারে!’
পুরুলিয়ার বনাধিকারিকেরা গত ক'দিনে একাধিক বার আশ্বস্ত করেছিলেন, বাঘিনি জ়িনাত লোকালয়ের কাছাকাছি নেই। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে যে ভাঁড়ারির জঙ্গলে জ়িনাত ছাগল মেরেছে, তার কাছেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। জঙ্গল এলাকায় না–যেতে সেই গ্রাম ও তার আশপাশের এলাাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার চালাচ্ছে বন দপ্তর। গবাদি পশু মারা যাওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে বনাধিকারিকেরা নাইলন ফেন্সও এনে রেখেছেন। জঙ্গল এলাকায় যেদিকে লোকালয় রয়েছে, সে দিকে ওই নাইলন ফেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবীমাহাতো। তিনি জানান, নাইট প্যাট্রলিংও বাড়ানো হচ্ছে। অন্য জেলা থেকে আরও অভিজ্ঞ বনকর্মীদের আনা হচ্ছে বান্দোয়ানে।