ঝাড়গ্রাম: ঐতিহাসিক জায়গা এক্সপ্লোর করতে আপনাদের ভালো লাগে? ডিসেম্বরের শীতে হিমেল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে ইতিহাসের পাতায় বুঁদ হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে? প্রাচীন রাজবাড়ির ঐতিহ্যকে হাতের নাগালে পেয়ে চেটেপুটে উপভোগ করতে চান? তা হলে ছুটির বাজারে কাছেপিঠে ভ্রমণের তালিকায় জুড়ে নিন ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড় রাজবাড়িকে। কচিকাচাদের সঙ্গে নিয়ে ঢুঁ মেরে আসুন।
নতুন বছরের আগে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে রাজবাড়ির দরজা। অন্দরমহলে থাকতে পারবেন পর্যটকেরা! এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনশো বছরের প্রাচীন রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষ। খুশি পর্যটনপ্রেমী মানুষজন। অতীতে অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রামে বেড়াতে এলে পর্যটকরা শুধুমাত্র রাজবাড়ির প্রাসাদ দেখে ফিরে যেতেন। প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশাধিকার ছিল না। অনেক পর্যটক রাজবাড়িতে রাত্রিযাপন করার ইচ্ছা প্রকাশ করছিলেন। তাঁদের মনোবাসনা পূরণে উদ্যোগী হয়েছে রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষ।
প্রাচীন রাজবাড়ির ইতিহাস কোণায় কোণায় বিদ্যমান। স্থাপত্য, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের পাতায় কার্যত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ করতে পারবেন আপনিও। দেওয়ালে বাহারি রঙের চাকচিক্য না থাকলেও পুরনো স্মৃতি আপনাকে দু’দণ্ড শান্তি এনে দিতে পারে। শহুরে মানুষদের জন্য শান্তির খোঁজে রাজবাড়ির অন্দরমহলে চালু হয়েছে ‘হেরিটেজ চিল্কিগড় রাজ প্যালেস’ নামের এক অতিথিশালা। রাত্রিযাপনে একদিনের ভাড়াও মধ্যবিত্তের নাগালে। মাত্র ৮০০ টাকা থেকে শুরু। সবোর্চ্চ ১২০০ টাকা পর্যন্ত। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। আপাতত অনলাইন বুকিং-এর কোনও ব্যবস্থা নেই।
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে অন্যতম পর্যটনস্থল চিল্কিগড়। ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটকরা চিল্কিগড়ের মা কনকদুর্গা মন্দির দেখতে যান। দুর্গা মন্দির দর্শনের পাশাপাশি সেখানে কনক অরণ্যে পায়ে হেঁটে ঘোরারও ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দির সংলগ্ন এলাকা ২০১৮ সালের এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গের জীব বৈচিত্র্য পর্ষদের তকমা অর্জন করেছে।
খরস্রোতা ডুলুং নদীর তীরে ৬১ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে চিল্কিগড় মন্দির সংলগ্ন ভেষজ গাছের সম্ভার। এই কনকে তিনশোর বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। পর্যটকরা রাজবাড়িতে থেকেই দেখতে পারবেন চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দির, কনক অরণ্য ও ডুলুং নদী। রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অন্দরমহলের পাঁচটি রুমকে আপাতত অতিথিশালা করা হয়েছে। রাজবাড়ির নিজস্ব উদ্যোগে চালু হয়েছে এটি।
বন্ধুদের সঙ্গে ঝাড়গ্রাম বেড়াতে এসে চিল্কিগড় রাজবাড়িতে রাত্রিযাপন করেছেন কলকাতার বাসিন্দা শান্তনু চক্রবর্তী ও তাঁর বন্ধুরা। শান্তনুর কথায়, ‘আমি ক্লাস এইটে পড়ার সময়ে প্রখ্যাত লেখক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘সোনার গণপতি হিরের চোখ’ লেখায় প্রথমবার চিল্কিগড় রাজবাড়ি সম্পর্কে জেনেছিলাম। দীর্ঘদিন রাজবাড়ি দেখার ইচ্ছা ছিল। এ বার ঝাড়গ্রামে এসে সেই ইচ্ছেপূরণ হলো। রাজবাড়ির ভিতরে থেকে থাকা এক অন্যরকম অনুভূতি। অসাধারণ পরিবেশ।’
চিল্কিগড় রাজপরিবারের সদস্যা পল্লবী সিং ধবলদেব বলেন, ‘ঝাড়গ্রাম থেকে প্রচুর পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। তাঁরা প্রতিবার বাইরের থেকে রাজবাড়ি দেখে ফিরে যেতেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই রাজবাড়ির পাঁচটি ঘর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘হেরিটেজ চিল্কিগড় রাজ প্যালেস’ নামের অতিথিশালাটি। প্রাচীন রাজবাড়ির আদলেই রুমগুলিকে রাখা হয়েছে। পর্যটকরা প্রাচীন রাজবাড়ীর ঐতিহ্য এবং তার ইতিহাসকে অনুভব করতে পারবেন। গ্রহণ করতে পারবেন রাজবাড়ির ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার।’