ডাক্তার দিদিরা এবার ‘তেজস্বিনী’, ঝাড়গ্রাম পুলিশের অভিনব উদ্যোগ জেলার মেডিক্যাল কলেজে



আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়ার নৃশংস পরিণতির ক্ষত এখনও টাটকা। কলকাতা হোক বা উন্নাও, বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। আর সমাজের এই ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আত্মরক্ষায় একজন মেয়ের বলিয়ান হওয়া কতটা জরুরি। সে দিকে জোর দিতেই বিশেষ উদ্যোগ নিল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। ‘তেজস্বিনী’ প্রকল্প চালু হলো জেলায়। এই প্রকল্পে আত্মরক্ষার জন্য মেয়েদের কোরিয়ান মার্শাল আর্ট শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়া, অধ্যাপক, অধ্যাপিকা থেকে শুরু করে মহিলা কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জানান, ঝাড়গ্রাম জেলায় মেডিক্যাল কলেজ দিয়ে শুরু হলো। ৬২ জনকে নিয়ে প্রথম ব্যাচ শুরু হয়েছে। এক মাসের প্রশিক্ষণপর্ব চলবে। সপ্তাহে ২ দিন এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ক্যারাটের ‘ব্ল্যাক বেল্ট’-রা এই প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রথমে মেডিক্যাল কলেজে শুরু হলেও পরবর্তী গার্লস স্কুল, কলেজগুলিকেও যুক্ত করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে? প্রশিক্ষকরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ করে কেউ যদি পিছন থেকে আক্রমণ করে, চুলের মুঠি টেনে ধরে কোনও মহিলার, সেই অবস্থায় আক্রান্তের কী করণীয়, তার একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষক সুইটি থাপার বক্তব্য, ‘সেলফ ডিফেন্সের জন্য কোরিয়ান মার্শাল আর্ট শেখানো হচ্ছে।’ নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত তাঁর।

মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মেহের তেহেসিম, ঋদ্ধি সাহারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা মেডিক্যাল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হন, দিনরাত পরিষেবা দিতে হয়, সে সব জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা একটা বড় বিষয়।

মেহের তহসিমের কথায়, ‘আমাদের রাতেও ডিউটি করতে হয়। এমার্জেন্সিতে বিভিন্ন সময়ে যেতে হয়। শুধুমাত্র হাসপাতাল ক্যাম্পাসই নয়, একজন চিকিৎসককে বাইরেও যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। আরজি করের ঘটনা আমরা কেউই ভুলিনি। ওই দিদি সেমিনার রুমে ছিলেন। অথচ কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটল। দ্রুত শত্রুকে প্রতিহত করতে এই প্রশিক্ষণ আমাদের কাজে লাগবে বলেই মনে করছি। খুব ভালো পদক্ষেপ। সব জেলার সব কলেজেই এমনটা হওয়া উচিত। সমস্ত মহিলা যাতে সুরক্ষিত থাকেন, সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।’

ঝাড়গ্রাম গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপাল সুস্মিতা ভট্টাচার্যও এই উদ্যোগে খুশি। অনেক দিন ধরেই এ রকম একটা উদ্যোগ নিয়ে ভাবছিলেন তিনি। পুলিশ সুপার সবভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান প্রিন্সিপাল।

Post a Comment

Previous Post Next Post