গীতাপাঠের ময়দানে প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধর, কান ধরে ওঠবোস! দোষীদের খুঁজছে পুলিস


ব্রিগেডে পাঁচ লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ অনুষ্ঠানে যেন কোনও গোবলয়ের দৃশ্য দেখল কলকাতা। সেখানে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করায় এক প্যাটিস বিক্রেতার উপরে চড়াও হল ওই অনুষ্ঠানে আসা একদল যুবক। প্য়াটিস বিক্রেতাকে মারধর করা হয়, কান ধরে ওঠবস করা হয়। লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয় তার বাক্স। আমিষের সঙ্গে ভেজ প্যাটিসও বিক্রি করছিলেন ওই বিক্রেতা। কিন্তু তার কোনও কথাই না শুনে তার উপরে চড়াও হয় কয়েকজন যুবক। এদের অনেকেই হিন্দিতে কথা বলতে শোনা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিয়ো।
ওই ঘটনায় দুজন আক্রান্তের অভিযোগের ভিত্তিতে ২ মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিস। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এছাড়াও একজন সিপিআইএম নেতা তথা আইনজীবীও অভিযোগ করেছেন।
ব্রিগ্রেডে গীতা পাঠের দিন এক প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের ঘটনায় ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন সিপিআইএম নেতা তথা আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জী। তিনি বলেন, গীতা পাঠের ময়দানে যেভাবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটলো তা মেনে নেওয়া যায় না। পুলিসের উচিত ছিল স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে তদন্ত করার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তা হয়নি। তাই অভিযোগ দায়ের করা হল। এরপর পুলিস ব্যবস্থা না নিলে আইনের পথে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন সেদিন বিজেপির নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধী দলনেতা ছিলেন। সেখানে গীতা পাঠ করে একদল উন্মত্ত মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিল।এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এদিকে, ওই ঘটনায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস। ওই ঘটনায় কুণাল ঘোষ বলেন, ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছি। এগুলো বিজেপির অপসংস্কৃতি, কু সংস্কৃতি। যারা প্যাটিস বিক্রি করেন, তারা ধর্ম বর্ণ না দেখেই করেন। ওখানে অনেকেই চামড়ার জুতো পড়েছিল। তার বেলা প্রতিবাদ হল? গীতায় লেখা আছে গরিব মানুষকে এই ভাবে কষ্ট দিতে হবে? মানসিক বিকৃতির শিকার এরা। এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। যার ইচ্ছা হবে সে খাবে, আর যার ইচ্ছা হবে না খাবে না। এদের কালচারটাই এমন। এরা হেরেও শিক্ষা নেয়নি। আপনারা কি খাবেন, কি পড়বেন সেটা বলে চলেছে। বিজেপির নেতা তো বলেছেন মাছ খাওয়া যাবে না। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছের ওপরে এদের রাগ আছে। দিল্লিতে এরা ফতোয়া দিয়েছিল। জুলুমবাজি ওরা করে।

তৃণমূল নেতা আরও বলেন, বন্দেমাতরম, জয় হিন্দ বলা যাবে না। এটা তারা বলেছিল। এই মন্ত্র আমরা ছোট থেকে স্লোগান দিয়ে এসেছি। বিজেপির সবাই যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে ছিল না। তারা এটা বুঝবেন কি করে? মণীষীদের কিভাবে সম্বোধন করতে হয়, সেটাই জানেন না ওনারা। স্রষ্টার অবস্থান জানেন না প্রধানমন্ত্রী। ১৫০ বছরের অনুষ্ঠানে বন্দেমাতারমকে বিকৃত করা হয়েছে। সপ্তকোটি ও দ্বি-সপ্তকোটিকে ব্যবহার করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দেমাতরমে। কিন্তু এরা সেটাকে তুলে দিয়েছে। শব্দ তুলে দিয়েছে বিজেপি। কেন কাটলেন? বন্দেমাতরম স্রষ্টাকে শুধু বিকৃত নয়, সৃষ্টিকেও বিকৃত করেছে।

সংবাদ মাধ্যমে ওই প্যাটিস বিক্রেতা বলেন, নাম জিজ্ঞাসা করল। নাম তো আর লুকাতে পারি না! নাম বলতেই লাথি মেরে প্যাটিস ফেলে দিল। মারধর করল। কান ধরে ওঠবস করাল। তিন হাজার টাকার মাল ছিল। সব ফেলে দিয়েছে। এত বছর ব্যবসা করছি। কখনও এরকম হয়নি। 


Post a Comment

Previous Post Next Post