বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় না–ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন। বহুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি, পাশাপাশি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের মতো সংক্রমণও, তাঁর শারীরিক অবস্থাকে আরও দুর্বল করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৮৯ বছর বয়সে, এম. আর. বাঙ্গুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিজ্ঞ অভিনেতা। তাঁর প্রয়াণে টলিপাড়া শোকস্তব্ধ, শিল্পী মহলে নেমে এসেছে গভীর বিষাদের ছায়া।
অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল সমাজমাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখেন- “কল্যাণ চ্যাটার্জি, এক আকাশের নিচে–র কানাই দা চলে গেলেন। আলভিদা।” ওই ধারাবাহিকে একসঙ্গে কাজের স্মৃতি আজও তাঁর কাছে অমূল্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্বাস্থ্যজটিলতার কারণে কল্যাণ বাবু ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে শিল্পীসুলভ উষ্ণতা এবং সহকর্মীদের সঙ্গে, তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত স্নেহময়।
আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকেও তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করা হয়েছে। সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ফোরামের সদস্যরা সাধ্যমতো তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।” ফোরামের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মরদেহ হাসপাতাল থেকে সরাসরি কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়-জীবন ছিল দীর্ঘ, বৈচিত্র্যময় এবং গভীরভাবে প্রশংসিত। তাঁর কর্মজীবনে রয়েছে প্রায় চারশো ছবির অভিজ্ঞতা। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ (১৯৭১) ছিল তাঁর প্রথম ছবি—যা আজও বাঙালি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। এর পর একে একে ‘আপনজন’ (১৯৬৮), ‘সাগিনা মাহাতো’ (১৯৭০), ‘ধন্যি মেয়ে’ (১৯৭১), ‘জনঅরণ্য’ (১৯৭৬)-এর মতো অসংখ্য কাল্ট ছবিতে অভিনয় করে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বাংলা চলচ্চিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে।
শুধু টলিউড নয়, বলিউডেও তাঁর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। সুজয় ঘোষের হিট থ্রিলার ‘কাহানি’–তে ছোট হলেও স্মরণীয় চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ডিজিটাল দুনিয়াতেও তিনি সফলভাবে কাজ করেছেন। বিশেষ করে ‘তানসেনের তানপুরা’ ওয়েব সিরিজে তাঁর অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্র, কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন, টলিউডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রাভিনেতা এবং আর্টিস্ট ফোরামের সক্রিয় সদস্য। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার লড়াই শেষে, তাঁর চলে যাওয়া, বাংলা বিনোদন জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।