ED’র বিরুদ্ধে কী গণরোষ! প্রশ্ন তুলে দিল সন্দেশখালি

খবর বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক : 

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁদের বিরুদ্ধে এতদিন বাংলার বুকে কোথাও হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় নেমে এসে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায়নি। কিন্তু শুক্র সকালে সেই ঘটনাই ঘটেছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালিতে। সেখানে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে এদিন সাত সকালেই হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা Enforcement Directorate বা ED। তাঁদের সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর ঘনিষ্ঠ এই নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যাওয়ার পিছনে ছিল সেই রেশন দুর্নীতিরই মামলা। যে বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যাওয়া হয়েছিল, সেই বাড়ি ছিল আগে থেকেই তালাবন্ধ। অনেক ক্ষণ ডাকাডাকির পরেও কোনও সাড়া মেলেনি সেখান থেকে। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ED আধিকারিকদের নির্দেশে সেই বাড়ির দরজায় ঝোলা তালা ভাঙা শুরু করতেই তাঁদের ওপর চড়াও হন শয়ে শয়ে জনতা। আর এই হামলার ঘটনাই এখন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

জানা গিয়েছে, দরজা ভাঙার আগেই সেখানে শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। দরজা ভাঙার আগে থেকেই তাঁরা ED আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোও শুরু করেছিলেন। কিন্তু চড়াও হননি। ED আধিকারিকদের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা দরজায় ঝোলা তালা ভাঙা শুরু করতেই শয়ে শয়ে জনতা তাঁদের ওপর চড়াও হয়। ED আধিকারিকদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ধাক্কা দিতে দিতে তাঁরা তাঁদের গ্রাম থেকে বার করে দেন। পরিস্থিতি অনুকূল নয় বুঝেই, গ্রাম ছাড়েন ED আধিকারিকদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বাংলার বুকে এই প্রথম কোথাও এই ধরনের ঘটনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাদের। আর সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী ED’র বিরুদ্ধে গণরোষ জাগছে? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে সন্দেশখালির বুকেই। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। বেশ কয়েকটি রাস্তা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে অবরোধ করা হয়েছে। টায়ারে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করতেও দেখা গিয়েছে স্থানীয়দের একাংশকে। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে।  

জনগণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে ED আধিকারিকেরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বেড়িয়ে গেলেও তাঁদের পিছু ধাওয়া করা ছাড়েন বিক্ষুব্ধ জনতা। ইট-পাটকেল হাতে রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ। কয়েকটি রাস্তা অবরোধ করা হয়। টায়ারে আগুন ধরিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ প্রদর্শন। বেশ কয়েকটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। পুরো এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ইতিমধ্যেই ED’র তরফে স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানানো হয়। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। প্রশ্ন, এদিনের এই ঘটনা কী বার্তা দিচ্ছে? তদন্তে বাধাদান নাকি গণরোষ? ভাবাচ্ছে ED আধিকারিকদের। যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখলে আনজনতা থেকে দুষ্কৃতীরা ভয়ে চুল করে থাকে সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ কী আগে থেকে ঠিক করে রাখা ঘটনা নাকি গণরোষের বিস্ফোরণ? এই ঘটনা যে ঘটতে পারে তা কেন আগাম আঁচ পেলেন না ED আধিকারিকেরা? কেনই বা স্থানীয় থানার সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ করে তাঁরা তল্লাশিতে নামলেন না? কার্যত অনেক প্রশ্নই তুলে দিয়েছ সন্দেশখালি।

Post a Comment

Previous Post Next Post