গুনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাজকুমার ঋষিশ্বর বলেন, ‘তীব্র শীতে গোটা রাত সংকীর্ণ ওই কুয়োতে আটকে ছিল শিশুটি। জলে ভিজে ওর হাত-পা ফুলে গিয়েছিল। মুখের মধ্যে মাটি ঢুকে গিয়েছিল। জামাকাপড় সম্পূর্ণ ভেজা অবস্থায় ছিল।’
সুমিত মিনা নামে ১০ বছরের ছেলেটি গুনার পিপিলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ির সামনে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে মুখ খোলা ৩৯ ফুট গভীর কুয়োতে পড়ে যায় সে। কুয়োটি অনেক দিন ব্যবহার না হওয়ায় তার মুখ খোলা ছিল।
ছেলেটিকে উদ্ধার করতে ওই কুয়োর পাশে ২৫ ফুট গভীর গর্ত খোঁড়া হয়। সেই গর্ত দিয়ে ঢুকে ১৪০ ফুট পর্যন্ত গিয়ে হাত দিয়ে খুঁড়ে উদ্ধারকারীরা শিশুটির কাছে পৌঁছন। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে সেই উদ্ধার অভিযান। অবশেষে ১৬ ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে বের করে আনতে সক্ষম হন উদ্ধারকারীরা। দ্রুত তাঁকে নিকটবর্তী রাঘোগড় হাসপাতালে নিয়েও যাওয়া হয়। তবে সেখানেই মৃত্যুর কাছে হার মানে শিশুটি। চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যু হয় তার।
রাঘোগড়ের কংগ্রেস বিধায়ক জয়বর্ধন সিং সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এই রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। কুয়োর মধ্যে অক্সিজ়েনও পৌঁছে দেন তাঁরা। তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও রাতভর চলে উদ্ধার অভিযান।’
অন্যদিকে, রাজস্থানের কোটপুতলিতে এখনও উদ্ধারকারীরা আশা জিইয়ে রেখেছেন। গত সাত দিন ধরে ৭০০ ফুট গভীর কুয়োতে পড়ে রয়েছে তিন বছরের চেতনা। এখনও চলছে অভিযান। একটি দড়ির মধ্যে লোহার রিং জুড়ে প্রথমে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছিল। কিন্তু সেই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। গত বুধবার ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি পাইলিং মেশিন। ৭০০ ফুট গভীর কুয়োর পাশে একটি সমান্তরাল গর্ত খোঁড়া হয়েছে। তবে শুক্রবার থেকে লাগাতার ভারী বৃষ্টি উদ্ধার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাগাড়ে চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও চেতনার কাছে খাবার কিংবা জল পৌঁছে দিতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ফলে তার বেঁচে থাকার আশা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে ডাক্তারদের টিম। আনা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সও।
কাঁদতে কাঁদতে চেতনার মা ধোলি দেবী প্রশাসনের কাছে আর্জি রাখেন, ‘দয়া করে আমার মেয়েকে বের করে আনুন।’ চেতনার কাকা শুভ্রম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। ওরা জানিয়েছে, জেলাশাসক ম্যাডাম বিশ্রাম নিচ্ছেন। পরে কথা বলবেন।’
শনিবার সকালের মধ্যে পাইলিং মেশিন দিয়ে খোঁড়া সমান্তরাল গর্তটিতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এ বার ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আরও একটি হরিইজ়ন্টাল আট ফুট গর্ত খুঁড়বেন তাঁরা। অপরাশনের জন্য গর্তের মধ্যে আলো, পাখা, অক্সিজ়েনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। বিকল্প উদ্ধারকাজের পরিকল্পনা করতে সময় নেওয়ার ক্ষোভে ফেটে পড়েছে চেতনার পরিবার।
গত দু’সপ্তাহ আগে রাজস্থানের দৌসা জেলায় এভাবেই কুয়োতে পড়ে গিয়েছিল পাঁচ বছরের একটি শিশু। ৫৫ ঘণ্টার উদ্ধারকাজ চালিয়ে ছেলেটিকে বের করে আনা হয়। যদিও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।