বড়দিন, বর্ষবরণের আগে চারিদিকে উৎসবের আমেজ। এমন দিনে ভালবাসার মানুষের সঙ্গে পাওয়া, তাঁকে খুশি করতে মন চায় বইকি! সংসারের দায়দায়িত্ব, জীবনের ওঠাপড়ার মধ্যেও তাই ভালবাসার মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন বীরভূমের সিউড়ির যুবক বাপন বাদ্যকর। ভালবেসে কিছু দিতে চেয়েছিলেন স্ত্রীকে। পকেটের রেস্ত বিবেচনা করে, হাজার ভাবনাচিন্তা করেও কুল-কিনারা করতে পারছিলেন না। আচমকাই সরকারি গ্লোসাইনবোর্ডে বসানো ভালবাসার চিহ্নটিতে নজর আটকে যায় তাঁর।
গ্রিটিং কার্ড, টেডি বেয়ার, শোপিসে ভালবাসার চিহ্ন দেখতে অভ্যস্ত আমরা। বিশেষ দিনে ভালবাসার মানুষের জন্য তেমন উপহার কেনার চল রয়েছে। তাই রাস্তার গ্লোসাইনবোর্ডে ভালবাসার চিহ্নটি দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি বাপন। স্ত্রীকে দেওয়ার আদর্শ উপহার হিসেবে সেটিকেই মনে ধরে তাঁর। সেই মতো গ্লোসাইনবোর্ড থেকে সোমবার ভালবাসার চিহ্নটি খুলে নেন তিনি। কিন্তু এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরায় সেই দৃশ্য বন্দি হয়ে যায়। লালকুঠি পাড়ার সার্কিট হাউসের রাস্তার পাশের গ্লোসাইনবোর্ড থেকে ভালবাসার চিহ্নটি গায়েব দেখে পুলিশের টনক নড়ে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয় বাপনকে।
এর পর বুধবার মহম্মদবাজারের সেরেন্ডা থেকে বাপনকে গ্রেফতার করে সিউড়ি থানার পুলিশ। এলাকার পুরপ্রধানকেও ডাকা হয়। কোনও রকম ভণিতা না করে ভালবাসার চিহ্ন চুরির কথা স্বীকার করে নেন বাপন। জানান, সিউড়ির রক্ষাকালীতলায় শ্বশুরবাড়ি। স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্যই ওই চুরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিয়ে উপহার নিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে খান খান হয়ে যায় ভালবাসার চিহ্নটি। সেটি উপহার দিয়ে স্ত্রীকে প্রেম নিবেদনের পরিকল্পনা ছিল বলে জানান বাপন।
কলকাতার ইতিউতি যেমন 'আই লভ কলকাতা', 'আমার ভালবাসার শহর' গ্লোসাইনবোর্ড রয়েছে, তেমনই সিউডিতেও পুরসভার তরফে বিপুল খরচ করে শহরের তিন প্রান্তে 'আমার ভালবাসার সিউড়ি' লেখা গ্লোসাইন বসানো হয়েছিল। সেখানে বহু মানুষ সেলফিও তোলেন। এহেন ভালবাসার চিহ্ন চুরি যাওয়ায় ফাঁপরে পড়ে পুলিশ। কিন্তু বাপনের মুখে চুরির নেপথ্যকাহিনি শুনে আরও বিড়ম্বনা বাড়ে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এবং পুরসভার তরফে বাপনকে একগুচ্ছ গোলাপ কিনে দেওয়া হয়। ডেকে আনা হয় তাঁর স্ত্রীকে, যাতে গোলাপ দিয়ে স্ত্রীকে প্রেম নিবেদন করতে পারেন বাপন।
সিউড়ি পুরসভার প্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমার ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন বড়দিন পালন করিনি।" বড়দিনের উপহার স্বরূপও পুলিশও বাপনের অপরাধ মাফ করে দিয়েছে। সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। পুলিশের সামনেই হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপের তোড়া দিয়ে স্ত্রীকে প্রেম নিবেদন করেন তিনি। কেন এমন ঘটালেন প্রশ্ন করলে বলেন, "বউ আমার জান। সাহেবরা গোলাপ দিয়েছেন। বউকে প্রোপোজ করলাম।" চোখের সামনে প্রেমের এমন আখ্যান দেখে তাজ্জব সিউড়িবাসী।