বাদ কেন অসম! কাঠগড়ায় কমিশন


দেশের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুক্তিতেই কমিশনকে বিঁধলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোটার তালিকা থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গা–সহ বিদেশিদের বাদ দিতেই স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার) করা হচ্ছে বলে যুক্তি দিয়েছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্যের মতো বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্বও লাগাতার একই যুক্তি দিচ্ছেন। কিন্তু দেশে দ্বিতীয় দফায় যে ১২টি রাজ্যে ‘সার’ হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের নাম রয়েছে।

অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজ়োরামের সঙ্গে বাংলাদেশে সীমান্ত থাকলেও সেখানে এখন ‘সার’ হচ্ছে না। আবার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত নেই। রোহিঙ্গারা আদতে মিয়ানমারেরই বাসিন্দা। মায়ানমারের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজ়োরামের সীমান্ত থাকলেও এই রাজ্যগুলিতে ‘সার’ হচ্ছে না। ’২৬–এ দেশের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরালা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, অসমে ভোট রয়েছে। অসমে বিধানসভা নির্বাচন থাকলেও সেখানেও এখন ‘সার’ হচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ‘সার’–সূচি এবং যুক্তির মধ্যে এমন বিস্তর ‘বৈষম্য’ তুলে ধরেই ইসি–কে বিঁধলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

কমিশনের প্রকাশিত এই সূচি তুলে ধরে মঙ্গলবার অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, রোহিঙ্গারা ভারতে ঢুকলে যে চারটি রাজ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে, কেন সেই চারটি রাজ্যের একটিতেও ‘সার’ হচ্ছে না? কিছু দিন আগে অসমে রোহিঙ্গারা ধরা পড়লেও এবং সেখানে আগামী বছর ভোট থাকা সত্ত্বেও কেন বিজেপি শাসিত এই রাজ্যকে বাদ দেওয়া হলো? একই ভাবে সপ্তাহ দুয়েক আগে ত্রিপুরাতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়লেও কেন বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা শুধু পশ্চিমবঙ্গে ‘সার’ হচ্ছে?

তৃণমূল ভবনে মঙ্গলবার এলইডি স্ক্রিনে ভারতের মানচিত্র দেখিয়ে অভিষেক নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে একের পর এক প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিয়েছেন। ২০০২–০৪ এর সময়ে ভোটার তালিকায় যে স্পেশাল রিভিশন হয়েছিল তা দু’বছর ধরে চলেছিল। সেখানে মাত্র কয়েক মাসে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০ কোটি মানুষের বাড়িতে গিয়ে কমিশন ‘সার’ করবে, এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। সার্বিক ভাবে সিইসি জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বাধীন কমিশনের ‘সার’–এর রোডম্যাপ দেখেই অভিষেক এ দিন বলেছেন, ‘এই কারণে আমরা বলছি, এসআইআর মানে সাইলেন্টলি ইনভিজি়বল রিগিং। চুপি চুপি ভোটের কারচুপি। বিহারে যে ৬৫ লক্ষের নাম (খসড়া তালিকায়) বাদ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কত জন বাংলাদেশি, কত জন রোহিঙ্গা, কত জন অন্য দেশের নাগরিক, কার কোথায় বাড়ি, সেই তালিকা তো কমিশন রিলিজ় করেনি। বিহার আর বাংলা যে এক নয়, তা বিজেপি নেতারাও বুঝেছেন। তাই তাঁরা জ্ঞানেশ কুমারকে এগিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের (কমিশন) ঘাড়ে বন্দুক রেখে অমিত শাহ চালাচ্ছেন।’



Post a Comment

Previous Post Next Post