বেহালার পর্ণশ্রীতে শব্দ তাণ্ডবের প্রতিবাদে আক্রান্ত এক পরিবার, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বেহালা, ২৪ অক্টোবর:
শব্দ দূষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলো এক পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে, বেহালার পর্ণশ্রীর সরকারি আবাসন লাগোয়া জলাশয়ের পাড়ে। কালীপুজোর বিসর্জনের সময় ডিজে বাজানোর প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হন ওই আবাসনের বাসিন্দা শর্মিলা সেনশর্মা ও তাঁর পরিবার।
শর্মিলা দেবীর অভিযোগ, রাত সাড়ে বারোটার পরও তারস্বরে ডিজে বাজানো হচ্ছিল। তিনি রাস্তায় নেমে বাজনা বন্ধ করার অনুরোধ করলে, এক যুবক তাঁর প্রতি অশালীন ইঙ্গিত করে এবং আরও কয়েকজন যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাঁর স্বামী শুভাশিস সেনশর্মা ও ছেলে কঙ্কণ তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। শুভাশিসবাবুর নাক ফেটে যায়, আর কঙ্কণকেও আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ।
পর্ণশ্রীর এই সরকারি আবাসনে প্রায় তিনশো পরিবার বসবাস করেন। স্থানীয় আবাসিক কমিটির অভিযোগ, বছরভর কালীপুজো, দুর্গাপুজো, ছট সহ একাধিক উৎসবে ওই জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জনের সময় ডিজে, বাজি ও শব্দ দূষণের সমস্যা চরম আকার নেয়। আবাসিক সংগঠনের সম্পাদক ভাস্কর ভট্টাচার্য জানান, “বছরভর জলাশয়ে বিসর্জন হয়, জলও দূষিত হচ্ছে। বুধবার রাতের ঘটনার পর অধিকাংশ আবাসিকই চান, প্রশাসন যেন এখানে বিসর্জন বন্ধের ব্যবস্থা নেয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজোতেই এই জলাশয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার প্রতিমা বিসর্জন হয়। এই সময় শব্দদূষণ ও ভিড়ের জেরে বহুবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে আবাসিকদের।
ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে সেনশর্মা পরিবার ও আবাসিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্ণশ্রী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আক্রান্ত শুভাশিস সেনশর্মা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। শর্মিলা দেবী বলেন, “আমরা কোনও দিন ঝামেলায় জড়াইনি। অথচ শব্দের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেতে হলো। বিপদের সময় থানার কাউকেও পাশে পাইনি।”
প্রশাসনিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, বিসর্জনের রাতে কেন পুলিশের পক্ষ থেকে ঘাট সংলগ্ন এলাকায় নিয়মমাফিক ডিজে বা বাজি বন্ধের ঘোষণা করা হয়নি? এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের এসডব্লিউডি ডিভিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছরই এমন শব্দতাণ্ডব চলে, কিন্তু প্রশাসনের তরফে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এবারের ঘটনার পর, শান্তিপ্রিয় আবাসিকদের একটাই দাবি— শব্দমুক্ত নিরাপদ পরিবেশে বাঁচার অধিকার যেন তাঁরা ফিরে পান।