‘ছাব্বিশের ভোটে প্রভাব পড়তে বাধ্য’, তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে ‘ক্ষুব্ধ’ শাসক নেতারাই


মার খাচ্ছে তৃণমূল। মারছে তৃণমূল। দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এবার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল নেতারা। তাঁদের দাবি, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য হরিশ্চন্দ্রপুরে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এর প্রভাব ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনেও পড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে শাসকদলের নেতারাই সরব হওয়ায় কটাক্ষ করতে ছাড়ল না বিজেপি।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে আসছে। হরিশ্চন্দ্রপুরেও তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার রাতে মন্ত্রী তাজমুল হোসেন ও জেলা পরিষদের সদস্য বুলবুল খানের অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সারারাত তাণ্ডব চলে। থানা ঘেরাও হয়। ওই ঘটনায় সাইরাজ ইসলাম নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুধু সেই দিনই নয়, তার কিছুদিন আগেও হরিশ্চন্দ্রপুরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত হয়। যে সংঘাতের জেরে আতঙ্কে দোকান বাজার বন্ধ রাখা হয় পুজোর ঠিক আগে। পুলিশের টহলদারি, ধরপাকড় চলতে থাকে। বার বার হামলা এবং পালটা হামলার ঘটনা ঘটছে হরিশ্চন্দ্রপুরে। আর সেই নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন বলে মেনে নিচ্ছেন তৃণমূল নেতারাই। পুলিশের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকার অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন শাসকদলের নেতারাই।

তৃণমূল নেতা তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা স্বপন আলি বলেন, “আমরা গোষ্ঠী বুঝি না। হরিশ্চন্দ্রপুরে তৃণমূল কর্মীরা মার খাবে, এটা মেনে নেব না। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের হাতেই মার খাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস করলেই কেউ যদি ভাবেন যে তিনি সন্ত্রাস তৈরির করার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছেন, তা হলে ভুল করছেন। দরকার হলে আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামব। হরিশ্চন্দ্রপুরে রাজনৈতিক সন্ত্রাস চলছে। তৃণমূলের ব্যানার নিয়ে যাঁরা সন্ত্রাস চালাচ্ছেন, তাঁরা ভুল করছেন। সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সব দেখছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। ছাব্বিশের নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। হরিশ্চন্দ্রপুরে কারা সন্ত্রাস চালাচ্ছেন, তা সবাই জানেন।”

দলের গোষ্ঠী ঘংঘর্ষ নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ব্লক সভাপতি সাহেব দাসও। তিনি বলেন, “হরিশ্চন্দ্রপুর শান্তিপ্রিয় এলাকা। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর যারা জড়িত রয়েছে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যারা এসব করছে, তারা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। যারা এসব করছে, তারা যদি সত্যিই তৃণমূল করত, তাহলে এসব করত না। আমি বলব, তারা দুষ্কৃতী। পুলিশ জানে, কারা এসব করছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। তৃণমূল কর্মীরাই মার খাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে বলব, ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের পাশে রয়েছি।”

তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষ নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির উত্তর মালদহ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, “তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দলের মধ্যেই সুরক্ষিত নন। শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর নয়, সারা পশ্চিমবঙ্গে এটা হচ্ছে। তৃণমূলের লোক তৃণমূলকে মারছে। আর সাধারণ মানুষ মোটেই সুরক্ষিত নন। এরা সাধারণ মানুষকে বাঁচতে দেবে না। আসল কথা, তৃণমূলের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গন্ডগোলের সময় সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হচ্ছে। একজন মন্ত্রী দলের কর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? ছাব্বিশে মানুষ ভোট দেবে। আর তৃণমূলের বিসর্জন হবে।”

Post a Comment

Previous Post Next Post