ট্রাম্পের পাসপোর্টে 'লিঙ্গ বিভ্রাট'! নতুন নিষেধাজ্ঞায় রূপান্তরকামীদের শিরে সংক্রান্তি


আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যার ফলে এখন থেকে মার্কিন নাগরিকরা পাসপোর্টের আবেদন করার সময় নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় অনুযায়ী নয়, বরং জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ অনুযায়ী লিঙ্গ নির্বাচন করতে বাধ্য থাকবেন। এই সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের অধিকার সীমিত করার আরও একটি ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগ (Justice Department)-এর সেই আবেদনে সায় দিয়েছে, যা নিম্ন আদালতের এক বিচারকের আদেশকে বাতিল করে দিয়েছে। ওই আদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি কার্যকর হওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল। এখন আদালতের রায়ের ফলে ওই নীতি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এই নীতিটি কার্যত ১৯৯২ সাল থেকে প্রচলিত এক প্রথাকে উল্টে দিচ্ছে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (State Department) চিকিৎসাগত প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ থেকে ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয় পাসপোর্টে উল্লেখ করার অনুমতি দিত।

তবে বর্তমান নীতিতে বলা হয়েছে, পাসপোর্টে লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে জন্ম সার্টিফিকেট উল্লেখিত লিঙ্গ অনুযায়ী—অর্থাৎ কেবল ‘পুরুষ’ বা ‘মহিলা’। তৃতীয় কোনও বিকল্প থাকবে না।

সুপ্রিম কোর্টের তিনজন লিবারেল বিচারপতি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে মতামত দিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে পাসপোর্ট ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর প্রশাসনের অধীনে আবেদনকারীরা কোনও চিকিৎসাগত নথি ছাড়াই নিজেদের পছন্দমতো ‘পুরুষ’, ‘মহিলা’ বা ‘এক্স (X)’ — অর্থাৎ ননবাইনারি, ইন্টারসেক্স ও জেন্ডার নন-কনফর্মিং পরিচয় বেছে নিতে পারতেন।

কিন্তু ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ট্রান্সজেন্ডার আমেরিকানদের অধিকার সীমিত করার জন্য একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তাঁর সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন সরকার কেবলমাত্র দুটি লিঙ্গ—‘পুরুষ’ ও ‘মহিলা’—কেই স্বীকৃতি দেবে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন, ট্রান্সজেন্ডারদের লিঙ্গ পরিচয় “একটি মিথ্যা”।

এর আগেও, চলতি বছরের মে মাসে, সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডার সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিল। এরপর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিতর্কিত মন্তব্য করে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের ‘দ্যুডস ইন ড্রেসেস’ বলে আখ্যা দেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ৬-৩ রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতাযুক্ত সুপ্রিম কোর্ট এ বছর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রায় সব নীতির পক্ষেই রায় দিয়েছে, যেসব নীতি নিম্ন আদালতে আটকে ছিল। এই ধারাবাহিকতায় পাসপোর্ট সংক্রান্ত নীতিও তার ব্যতিক্রম নয়।

এদিকে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি যৌথ মামলা (class action lawsuit) এখনো চলমান রয়েছে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি শুধু ট্রান্সজেন্ডার নয়, বরং সমগ্র নাগরিক সমাজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ওপর আঘাত হানছে এবং এটি সংবিধানবিরোধী।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, এই রায় আমেরিকায় জেন্ডার ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক “অন্ধকার অধ্যায়” হিসেবে চিহ্নিত হবে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই নীতির ফলে লক্ষাধিক ট্রান্সজেন্ডার নাগরিকের জন্য সরকারি নথি সংগ্রহ, বিদেশ ভ্রমণ ও নাগরিক পরিচয় রক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post