লোকসভায় পেশ হল ‘জিরামজি বিল’, ১০০ দিনের প্রকল্পে গান্ধীর নাম বাদ পড়ায় বিরোধী-ক্ষোভে শামিল হলেন ‘বেসুরো’ তারুরও


১০০ দিনের কাজের মেয়াদবৃদ্ধি এবং প্রকল্পের নামবদল সংক্রান্ত বিল পেশ করা হল লোকসভায়। মঙ্গলবার বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রের কৃষি এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। এত দিন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নাম ছিল মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপাওয়ারমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, ২০০৫ (সংক্ষেপে মনরেগা)। বিলে এই প্রকল্পের নতুন নাম হয়েছে ‘বিকশিত ভারত- গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)’। সংক্ষেপে ‘জিরামজি’। গ্রামীণ রোজগার প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম সরানোর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধী সাংসদেরা।

শিবরাজ বিল পেশ করার পরেই লোকসভায় শোরগোল শুরু হয়। হাতে গান্ধীর ছবি নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদদের একাংশ। সংসদ ভবনের বাইরে মকর দ্বারে কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন বিরোধী সাংসদেরা। সংসদ চত্বরে গান্ধীমূর্তির সামনেও প্রতিবাদ চলছে। প্রকল্পের নামবদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও, যাঁকে সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া হলে প্রকল্পের নৈতিক উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। তারুরের কথায়, “এটা কেবল একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটা একই সঙ্গে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের দর্শনগত বনিয়াদের উপর আঘাত।”

নামবদল সংক্রান্ত অভিযোগ খারিজ করে শিবরাজের বক্তব্য, সরকার গান্ধীর আদর্শ মেনেই কাজ করে। তাঁর কথায়, “মোদী সরকার মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে বিশ্বাস করে। তাই আগের সরকারগুলির তুলনা। এই সরকার গ্রামীণ উন্নয়নে অনেক বেশি কাজ করেছে।” বিরোধীদের রামনামে আপত্তি কোথায়, সেই প্রশ্নও তোলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

পেশ হওয়া বিলে ১০০ দিনের কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ১২৫ দিন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিলের কপিতেই উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ২০৪৭ সাল পর্যন্ত দেশে উন্নয়নের রূপরেখা ‘বিকশিত ভারত’-এর সঙ্গতি রেখেই এই গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এ-ও বলা হয় যে, গ্রামীণ ভারতের সমৃদ্ধির জন্য গ্রামের প্রতিটি পরিবারের সাবালক স্বেচ্ছাসেবককে এই কাজে নিযুক্ত করা হবে। প্রতিটি অর্থবর্ষে ১২৫ দিনের কাজ পাবেন প্রত্যেকে।

কিন্তু কোন রাজ্যে কত অর্থ বরাদ্দ হবে, তা ঠিক করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছে। রাজ্যের প্রস্তাবের বদলে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের মাপকাঠি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করবে। ফলে আইনে রোজগারের নিশ্চয়তা আর থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এত দিন আইনে কাজ চাইলে কাজ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। গ্রামে কাজের চাহিদা অনুমান করে রাজ্য কেন্দ্রের কাছে টাকা চাইত। এখন দিল্লি থেকে অর্থ বরাদ্দ করে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, মোদী সরকার কাজের গ্যারান্টির দিন বাড়ানোর কৃতিত্ব নিলেও রাজ্য সরকারের ঘাড়ে মজুরির খরচের শতকরা ৪০ ভাগের দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের প্রধান শরিক তেলুগু দেশমও আশঙ্কা জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার লোকসভায় সরব হন প্রিয়ঙ্কাও।

Post a Comment

Previous Post Next Post