ফের SIR ইস্যুতে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী করে মমতা বন্দোপাধ্যায়।কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে দলীয় জনসভা থেকে কেন্দ্রকে নিশানা করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "সামনে SIR-পিছনে NRC-এর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি বাংলাকে বিভেদ করতে দেব না। এসআইআর করো কোন অসুবিধা নেই। ২ বছর সময় নাও। আমরা যদি SIR-এর অনুমতি না দিতাম তাহলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করত ওরা। ডবল ইঞ্জিন সরকার উত্তর প্রদেশ, অসমে ডিটেশন ক্যাম্প চালু করে দিয়েছে। ওড়িশা থেকে রাজস্থান চলছে বাঙালিদের উপর অত্যাচার। বাংলার মানুষের উপর অত্যাচার করে বাংলা দখল করার শখ। শুধু মিথ্যা প্রচার। এক কোটি লোকের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত। মারা যায়নি অথচ মৃত দেখানো হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের ভোটের নামটা তুলতে বলুন। প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে MAY I HELP YOU ক্যাম্প হবে। এত খিদে! আর কত খাবে। বাংলা মাথা নত করতে জানে না"।
আজ সংসদে SIR ইস্যুতে সুর চড়ালেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "SIR ভোট মুছে ফেলার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছে, পাঁচ লক্ষ ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে, ছয় লক্ষ ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে... আর বিজেপি সেটা উদযাপন করছে"।
তিনি আরও বলেন, "কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব নির্ধারণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। বিহারে আপনারা অনেক কথা বলেছেন। মোদী গিয়ে বলেছেন যে আমরা অনুপ্রবেশকারীদের অপসারণের জন্য SIR করেছি। একজনও অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদি রোহিঙ্গারা এদেশে অনুপ্রবেশ করে থাকেন তাহলে আপনারা আপনারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব,"। বাঙালি বিদ্বেষ ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করে শ্রীরামপুরের সাংসদ আরও বলেন,এই কারণেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে, আর প্রধানমন্ত্রীর মুখে 'বঙ্কিম দা'। তিনি কি কখনও সর্দার প্যাটেলকে "দাদা" বলে ডেকেছেন?
রাজ্য জুড়ে চলছে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন। নির্ভূল ভোটার লিস্ট তৈরির দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে কমিশন। এবার প্রেসিডেন্সি ডিভিশন, মেদিনীপুর ডিভিশন, বর্ধমান ডিভিশন, মালদা ডিভিশন ও জলপাইগুড়ি ডিভিশনের জন্য পাঁচ জন সিনিয়র আইএএস আধিকারিককে স্পেশ্যাল রোল অবজার্ভার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ অনুসারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি কুমার রবি কান্ত সিংহকে প্রেসিডেন্সি বিভাগে বিশেষ রোল অবজার্ভার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি কৃষ্ণকুমার নিরালাকে পাঠানো হচ্ছে বর্ধমান বিভাগে। গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারি পঙ্কজ যাদবকে জলপাইগুড়ি বিভাগে, অর্থ মন্ত্রকের অর্থনৈতিক বিষয়ক দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারি অলোক তিওয়ারিকে মালদা বিভাগে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি নিরাজ কুমার বানসোরকে মেদিনীপুর বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিশন অনুমান করছে, রাজ্যজুড়ে এক কোটিরও বেশি ভোটারকে শুনানি ও নথি যাচাইয়ের জন্য ডাকা হতে পারে। ২০০২ সালের রোলের সঙ্গে সংযোগ প্রমাণিত না হলে তাদের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। এই বিশাল নথি যাচাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছে কমিশন। এক কর্মকর্তার কথায়, “নথি যাচাইয়ে সামান্য ভুল হলেও অযোগ্য নাম ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়তে পারে। তাই এই পুরো প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ইসি বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে।”
চিফ ইলেকটোরাল অফিসারের দপ্তরের এক সিনিয়র আধিকারিক জানান, রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত ৫৬.৩৭ লাখ ভোটারকে ‘আনকালেক্টেবল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৭.৬৬ কোটি গণনা ফরম বিতরণ করা হয়েছে। অধিকারিকের ব্যাখ্যায়, “৫৬ লাখের বেশি নাম খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, ২৩.৯৮ লাখ মৃত ভোটার, ১০.৯৫ লাখ ঠিকানা ম্যাচ না হওয়া ভোটার, ১৯.৬৫ লাখ অন্যত্র স্থানান্তরিত ভোটার, ১.৩২ লাখ ডুপ্লিকেট এন্ট্রি এবং আরও ৪৭,৮৩২টি বিভিন্ন কারণে বাদ দেওয়া এন্ট্রি"।