‘বন্দে মাতরম’, ‘SIR’: সংসদে সরগরম সপ্তাহ


সাম্প্রতিক অতীতে সংক্ষিপ্ততম শীতকালীন অধিবেশনের সবথেকে আকর্ষণীয় সপ্তাহটি কি আজ, সোমবার শুরু হচ্ছে সংসদে? আজ লোকসভায় ‘বন্দে মাতরম’–এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা হবে। এই আলোচনা শেষ হলেই নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, যেখানে উঠতে চলেছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (সার) প্রসঙ্গ। এই দু’টি ইস্যুতেই সরকার বনাম বিরোধী সংঘাতে ময়দান ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে রয়েছে। ফলে তর্ক–বিতর্কে সংসদ সরগরম হওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করছেন না সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

সংসদের বিজ়নেস অ্যাডভাইজ়রি কমিটির (বিএসি) বৈঠকে স্থির হওয়া সূচি অনুযায়ী লোকসভা এবং রাজ্যসভায় কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা করে ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে আলোচনা হবে। সংসদীয় সূত্রের দাবি, সরকারের তরফে আলোচনায় প্রথম বক্তা হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছর ব্যাপী উত্‍সবের সূচনা পর্বে গত ৭ নভেম্বর কংগ্রেসকে তীব্র নিশানা করেছিলেন মোদী বলেছিলেন, ‘বন্দে মাতরম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল৷ এই গান প্রতিটি ভারতীয়ের অনুভূতি প্রকাশ করেছিল৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ১৯৩৭–এ বন্দে মাতরম-এর আত্মার অংশ, গুরুত্বপূর্ণ স্তবকগুলি বিচ্ছিন্ন করা হয়৷ এর ফলে দেশভাগের বীজও বপন করা হয়েছিল৷ বর্তমান প্রজন্মের জানা দরকার, কেন জাতিগঠনের এই মহামন্ত্রের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছিল৷ এই বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও দেশের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ৷’ প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছিল কংগ্রেসও। এই আবহে এ দিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, সে দিকে নজর থাকবে।

কংগ্রেসের তরফে ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন গৌরব গগৈ এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ তৃণমূলের তরফে লোকসভায় ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং মহুয়া মৈত্র৷ মনে করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ তুলতে পারে রাজ্যে শাসকদল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দে মাতরম’–এর সার্ধশতবর্ষ ঘটা করে পালন করলেও কেন বিজেপি–শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বললে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে সরব হতে পারে তৃণমূল।

লোকসভার পরে রাজ্যসভায় ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে বিশেষ আলোচনায় সরকারের তরফে বক্তব্য রাখতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা৷ তৃণমূলের তরফে বক্তব্য রাখতে পারেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়৷

‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে আলোচনার পরেই শুরু হওয়ার কথা নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা। এই পর্বে ‘সার’ নিয়ে সংসদের দু’কক্ষেই কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা করে আলোচনা হওয়ার কথা। সূত্রের দাবি, ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ নিয়ে সরব হতে পারেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। ‘সার’ নিয়ে সরকারকে একযোগে আক্রমণ শানাতে পারে বিরোধী জোট। তৃণমূলের তরফে লোকসভায় ‘সার’ ইস্যুতে বক্তব্য রাখতে পারেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলীয় সূত্রের দাবি, তাঁর বক্তব্যে বাংলার ‘সার’ পরিস্থিতি এবং মৃত্যু ও আত্মহত্যার বিষয়টি তুলতে পারেন কল্যাণ।

সংসদীয় সূত্রের দাবি, ‘সার’–এর সমর্থনে সরব হতে পারে ট্রেজারি বেঞ্চ। শাসক শিবিরের সাংসদরা নির্বাচনী সংস্কারকে ত্বরান্বিত করে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি প্রয়োগের দাবিও জানাতে পারেন৷ ‘সার’ ইস্যুতে সরকারের তরফে জবাবি ভাষণ দিতে পারেন আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল।

তবে, ‘সার’ নিয়ে আলোচনার নির্ঘণ্ট এখনও প্রকাশ করেনি সরকার। এতে তৃণমূলের প্রশ্ন, সরকার তাদের প্রতিশ্রুতিমতো ‘সার’ নিয়ে আদৌ আলোচনা করবে তো?

Post a Comment

Previous Post Next Post