করোনা-আবহেই কলকাতায় এবার '৩০০ কোটি'র পুজো!


তিনশো কোটি? করোনা-আবহে এত টাকা খরচ করে পুজো করছে কারা? কোন পুজো কমিটি? ৩০০ কোটি'র মানে কী? এটা কি পুজোর বাজেট? কোথা থেকে আসছে বিপুল এই বাজেট? কে এনে দিল? খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই সব প্রশ্ন ভিড় করবে।

তবে তা নগদ টাকায় নয়। ভ্যালুয়েশনে। কী রকম? 

পুজো-গবেষকরা বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাস ঘেঁটে বলছেন, বাংলার বুকে এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম বাজেটের যে দুর্গাপুজোটি আয়োজিত হয়েছিল সেটি ছিল আজ থেকে ৪১৫ বছর আগের। অবিভক্ত বাংলার রাজশাহীতে ১৬০৬ সালে। ভারত এবং বাংলা তখন মুঘল শাসনাধীন। সে সময়ে শাসন ও পীড়ন পাশাপাশিই চলছিল। তাতে নানা ভাবে বিধ্বস্ত হচ্ছিল গ্রামবাংলার জনজীবন। গবেষকেরা বলছেন, সে সময়ে বেশ কিছু জায়গায় মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল, লুঠ হয়েছিল দেবোত্তর সম্পত্তিও। 

সেই সামাজিক-রাজনৈতিক পরিসরে অনেকটা যেন স্ব-জাতিসত্তাকে তুলে ধরতেই রাজশাহীর রাজা কংস নারায়ণ নজিরবিহীন এক বর্ণাঢ্য শারদীয় পুজোর আয়োজন করলেন। জানা যায়, সেই সময়ে এই পুজোর বাজেট ছিল (তৎকালীন মূল্যমানে) ৯ লক্ষ টাকা! পুজোর চারদিন গোটা এলাকার মানুষের জন্য ছিল ঢালাও খাওয়া-দাওয়া, নতুন পোশাক ও অন্য উপহার-সহ বিচিত্র আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা। সব কিছুই হয়েছিল রাজা কংস নারায়ণের অর্থানুকূল্যেই। 

বেহালার 'বড়িশা সর্বজনীন ('বড়িশা ক্লাব' নয়, ওটি আলাদা একটি পুজো) দ্বাদশ মন্দির দুর্গাপুজো কমিটি'র এবারের থিমের ক্যাচলাইন এটিই। ৪১৫ বছর আগের ৯ লক্ষ টাকা ২০২১ সালের ভ্যালুয়েশনে দাঁড়াচ্ছে ৩০০ কোটি টাকায়! রাজশাহীর সেই পুজোবাজেটের হালের মূল্যমানের নিরিখে এই ৩০০ কোটির 'অঙ্ক'টিকেই 'ফোকাস' করছে 'বড়িশা সর্বজনীন দ্বাদশ মন্দির দুর্গাপুজো কমিটি'।

কী ভাবে? 

রাজশাহীর সেই পুজো এবার প্রায় নিখুঁতভাবে উঠে আসছে বড়িশা দ্বাদশ মন্দির স্কুলের মাঠে। এই পুজো দেখতে-দেখতে হারিয়ে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। মণ্ডপ দেখতে-দেখতে ফিরে পাওয়া যাবে অবিভক্ত বাংলার না-দেখা পুজোর পুরনো আমেজ। কাকতালীয় ভাবে রাজশাহী নবগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণ, অর্থাৎ রাজা কংস নারায়ণের পুজো যেখানে হয়েছিল, সেই 'লোকেশনে'র সঙ্গে বিস্তর মিল এই বড়িশা দ্বাদশ মন্দির প্রাঙ্গণের। তাই দু'য়ে দু'য়ে চার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে দু'বার ভাবেননি পুজো উদ্যোক্তা ও শিল্পী। 

Post a Comment

Previous Post Next Post