জীবন দান! প্রায় বন্ধ হওয়া হৃদপিণ্ড চালু করে বিহারের মহিলাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিল NRS


পড়শি রাজ্যের প্রসূতির কোলের আলো নিভতে দিল না বাংলা। হবু মায়ের প্রায় বন্ধ হয়ে আসা হার্টে প্রাণ ফেরাল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (NRS Medical College)।

বিহারের বাসিন্দা বছর তিরিশের রীতা তিওয়ারির প্রথম সন্তান মারা যায় গ্রামেই। আট বছরের সন্তানকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান ছিল তিওয়ারি দম্পতি। ফের মা হওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেন। সাহায্য নেন আইভিএফ এর। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে পেটে আসে যমজ সন্তান। কিন্তু এবার বিপদ অন্য।

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন রীতা। দেখা যায়, হার্ট অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাম্প করতে পারছে না। প্রাণে বাঁচতে বিহার থেকে দৌড়ে আসেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। স্ত্রীরোগ বিভাগে (ইউনিট চার) ভরতি করা হয় তাঁকে। স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. স্বয়ং প্রভা নন্দীর কথায়, সন্তান সম্ভবার হার্টের ইজেকশন ফ্র‍্যাকশন ১৯ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। এমন কাউকে মাতৃত্বের স্বাদ দেওয়া ছিল মারাত্মক কঠিন।

কী এই ইজেকশন ফ্র‍্যাকশন? পাম্প করে শরীরের প্রতিটি কোণায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাঠায় হার্ট। কতটা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাল শরীরের প্রতিটি কোণায়? তার পরিমাপই হল ইজেকশন ফ্র‍্যাকশন। ইজেকশন ফ্র‍্যাকশন ভাল থাকার অর্থ যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাচ্ছে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে। কিন্তু কম থাকার অর্থ মারাত্মক বিপদ। যেমনটা ছিল রীতা তিওয়ারির। হার্টের ডান দিকের ওপরের প্রকোষ্ঠ (অ্যাট্রিয়াম) দিয়ে হৃদপিণ্ডের মধ্যে প্রবেশ করে রক্ত। দু’বার হৃদস্পন্দনের মধ্যে একটা ছোট্ট পজ থাকে। এই সময়েই রক্ত নিচের বাদিকের ভেন্ট্রিকলে প্রবাহিত হয়। ভেন্ট্রিকল একবার ভরতি হয়ে গেলে ফের হৃদস্পন্দন। মুহূর্তে রক্ত সেখান থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের নানান অংশে। মানুষের শরীরে স্বাভাবিক ইজেকশন ফ্র‍্যাকশন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রত্যেকবার হৃদস্পন্দনের সঙ্গে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ রক্ত সারা দেহে ছড়িয়ে পরে। বছর তিরিশের রীতা তিওয়ারির ক্ষেত্রে তা নেমে দাঁড়িয়েছিল ১৯ শতাংশে! অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের অভাবে ক্রমশ এলিয়ে পড়ছিল শরীর।

এদিকে আট বছরের প্রথম সন্তান মারা গিয়েছে। কোল খালি হওয়ার যন্ত্রণা ভুলতে ফের চেষ্টা। তাঁকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে কোমর বাঁধেন চিকিৎসকরা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ডা. পল্লবকুমার মিস্ত্রী এবং ডা. প্রিয়দর্শী মণ্ডলের অধীনে চিকিৎসা শুরু হয় রীতার। ডা. পল্লবকুমার মিস্ত্রীর কথায়, প্রসূতির শ্বাসকষ্ট ছিল মারাত্মক। চিকিৎসা পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডায়লেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি। হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। অবশেষে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে অ্যানাস্থেসিস্ট ডা. দেবানন্দ সরকারের তত্ত্বাবধানে সিজার করা হয় মায়ের। দুই ফুটফুটে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন রীতা তিওয়ারি।

 




Post a Comment

Previous Post Next Post