খবর বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক : আরও একটি ধর্মনগরীতে হারের মুখ দেখতে হল বিজেপিকে। যা পদ্মশিবিরের কাছে আরও একটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিদের অনেকে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে রামনগরী অযোধ্যা যে কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই ফৈজাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে হারের সঙ্গে অনেকেই উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথে বিধানসভার উপনির্বাচনে পদ্মের হারের তুলনা টানতে শুরু করেছেন। বদ্রীনাথের পাশাপাশি মঙ্গলৌর আসনটিও কংগ্রেস পেয়েছে।
ঘটনাচক্রে, উপনির্বাচনে বদ্রীনাথ আসনে বিজেপি যাঁকে প্রার্থী করেছিল, সেই রাজেন্দ্র ভান্ডারিই ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে এই আসনে জিতেছিলেন। কিন্তু এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর তাঁকে উপনির্বাচনে প্রার্থীও করে বিজেপি। যাঁর উপর আস্থা করে শিবনগরীর এই আসন জিততে চেয়েছিল পদ্মশিবির, কিন্তু তলে তলে যে বদ্রীনাথবাসীদের মধ্যে ভান্ডারি বিরোধী হাওয়া বইছিল, তা বোধহয় আঁচ করতে পারেননি পদ্মের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ভান্ডারি শিবনগরীর আস্তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন।
বদ্রীনাথ আসন জয় নিয়ে বিজেপি যতটা মরিয়া ছিল, কংগ্রেসও ঠিক ততটাই। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, যে আসন কংগ্রেসের ছিল, উপনির্বাচনে তারা সেই আসনই ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। এই আসনে বরাবর কংগ্রেসই জিতে এসেছে। কিন্তু এ বার প্রেক্ষিতটা ছিল ভিন্ন। একেই ধর্মনগরী, তার উপর ওই এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজকে সামনে রেখে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। লোকসভায় অযোধ্যা মুখ ফেরালেও বিধানসভা উপনির্বাচনে বদ্রীনাথ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল পদ্মশিবির। কিন্তু রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, ভান্ডারিকে প্রার্থী করে কংগ্রেস ভোটারদের নিজেদের দিকে টেনে আনার যে কৌশল নিয়েছিল বিজেপি, শিবনগরী তাতে সাড়া দেয়নি। যার জেরেই এই ধর্মনগরীতেও হারের মুখ দেখতে হল বিজেপিকে। বিজেপি প্রার্থী ভান্ডারি পেয়েছেন ২২৯৩৭ ভোট। অন্য দিকে, কংগ্রেস প্রার্থী লাখপত সিংহ বুটোলা পেয়েছেন ২৮১৬১ ভোট। অর্থাৎ বিজেপি প্রার্থী ভান্ডারিকে ৫২২৪ ভোটে হারিয়েছেন বুটোলা।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘তুরুপের তাস’ বলতে যে বিষয়টি ছিল, সেটি হল অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ। আর এই রামন্দিরকে সামনে রেখেই শুধু উত্তরপ্রদেশ কেন, গোটা দেশেই ভোটের বৈতরণী পার করার লক্ষ্যে নেমেছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। এনডিএ জোট সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও ভোটের ফল বেরোতে দেখা গিয়েছে, অযোধ্যাতেই ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। বিজেপি সূত্রে খবর, অযোধ্যাতে দলের এই হার স্বয়ং শীর্ষ নেতৃত্বরাও কল্পনা করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, অযোধ্যার পাশাপাশি লোকসভা ভোটে প্রয়াগরাজ, চিত্রকূট, নাসিক এবং রামেশ্বরমেও হেরেছেন মোদী-শাহের প্রার্থীরা। একের পর এক ধর্মীয় স্থল মুখ ফেরালেও বিধানসভা উপনির্বাচনে বদ্রীনাথে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু এখানেও হেরে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মাস খানেক আগেই বদ্রীনাথে পুরোহিত এবং স্থানীয়রা, এমনকি পাণ্ডারাও কেন্দ্রের চারধাম নিয়ে যে মাস্টারপ্ল্যান তার বিরোধিতা করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, মন্দিরে ভিআইপিদের দর্শন নিয়েও প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন তাঁরা। যার জেরে সাধারণ পুণ্যার্থীদের অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও দাবি তাঁদের। তা হলে কি এই ‘ফ্যাক্টর’গুলিই বিজেপির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল? কী কারণে ধর্মনগরীগুলিতে হারের মুখ দেখতে হচ্ছে, এখন সেটাই দলের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পদ্ম শিবির সূত্রে খবর, সেই কারণ অন্বেষণেও লেগে পড়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।