শীত মানেই রসুনে মাখা বেগুনপোড়া, কেয়ার-অফ নবাবগঞ্জ




মালদা

হালকা আগুনে এ পিঠ ওপিঠ পুড়িয়ে নিলেই হবে। এরপর কাঁচা লঙ্কা, সর্ষের তেল, লবণ, লেবু আর এক টুকরো রসুনের কোয়া দিয়ে তাকে মাখিয়ে নিন। চোখ বুজে মুখে পুরলেই মনে হবে রসগোল্লা! এত গুণকীর্তন যাকে নিয়ে, তার নাকি কোনও গুণ নেই। মালদার শতাব্দী প্রাচীন নবাবগঞ্জের বেগুনকে সত্যিই নির্গুন বলা যাবে না। তার আকার কম করে এক কেজি। সর্ব্বোচ্চ তিন কেজি।

এক সময়ে নবাবদের খুব পছন্দের ছিল এই বেগুন। তাঁরা প্রজাদের দিয়ে বিঘার পর বিঘা জমিতে এই বেগুন চাষ করাতেন। আর সেই থেকেই এই বেগুনের নাম হয়েছে নবাবগঞ্জের বেগুন। এখন অবশ্য বেগুনকে ঘিরে নবাবগঞ্জ নামে একটি এলাকার পরিচিতি হয়েছে। সেখানে সাপ্তাহিক হাটে এই বেগুন বিক্রি হয়।

রাজ্যের অন্য কোনও জেলায় এই বেগুন উৎপাদন হয় না বলে জানিয়েছে উদ্যানপালন দপ্তর। ব্যাখ্যা হিসেবে দপ্তরের মালদা উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েক বলেন, ‘উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি যেমন, ঠিক তেমনই মালদার নবাবগঞ্জের বেগুন বাইরে কোথাও এই বেগুনের চাষ হয় না। এর জন্য ভৌগোলিক কারণ অবশ্যই রয়েছে। আর একটি কারণ, দীর্ঘমেয়াদি বীজ সংরক্ষণ। তবে নবাবগঞ্জের বেগুনের স্বাদের কোনও তুলনা হয় না।’

পুরাতন মালদা ব্লকের নবাবগঞ্জে সব থেকে বেশি এই বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়াও রতুয়া ১ ব্লকের পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজাপুর এলাকা, গাজোল ব্লকের পান্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই বেগুন চাষ হয়। উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা জেলার এই তিনটি ব্লকের প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে এই বেগুনের চাষ হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে মাঝামাঝি থেকেই বেগুন বাজারে আসতে শুরু করেছে। ১২০ টাকা কিলো। উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে এই বেগুনের।

পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের নবাবগঞ্জ এলাকার বেগুনচাষি চাঁদ মহম্মদ, সিরাজ শেখ বলেন, ‘এই জ্ঞবেগুন নবাবদের খুব পছন্দের ছিল বলে বাপ–ঠাকুরদার মুখে শুনেছি।’ রাজাপুর গ্রামের চাষি লাল মহম্মদ বলেন, ‘৭ বিঘা জমিতে নবাবগঞ্জের বেগুন চাষ করেছি। প্রতি বছরই বেগুনের ফলনের পর সেটির বীজ সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। কারণ, এই বীজ আর বাইরে কোথাও পাওয়া যায় না। সেপ্টেম্বর মাস শেষ হতেই জমিতে বীজ রোপন করা হয়। এরপর তিন মাস ধরেই চলে গাছের পরিচর্যা। এক বিঘা জমিতে এক থেকে দেড় কুইন্টাল বেগুন উৎপাদন হয়। ফলে লাভের পরিমাণটা অনেকটাই বেশি থাকে।’

উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত দোঁয়াশ ও বেলে সংমিশ্রণ জমিগুলিতে নবাবগঞ্জের বেগুন চাষ হয়ে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান তো রয়েছেই। তার পাশাপাশি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এই বেগুন উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে অনেকেই এই চাষে আগ্রহ দেখান না। এই কিছুদিন আগেও পুরাতন মালদার নবাবগঞ্জ এলাকায় এই বেগুন চাষ হতো। এখন রতুয়া, গাজোলেও ধীরে ধীরে এই বেগুন চাষের প্রসার ঘটেছে। মালদার বাজারেও ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে নবাবগঞ্জের বেগুন।

ইংরেজবাজার শহরের সদরঘাট বাজার এলাকায় এক ক্রেতা বিপুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বাজারে নবাবগঞ্জের বেগুন বিক্রি হচ্ছে। কিনতে গিয়ে দাম শুনেই হাত পুড়ে যাওয়ার জোগাড়। তবে এর স্বাদ অন্যরকম। বেগুন ভাজা হোক অথবা বেগুন পোড়া, স্বাদে ও গুণে অতুলনীয়।’ সামন্ত লায়েক জানিয়েছেন, ‘জেলার তিনটি ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ হচ্ছে। আকারে লম্বাকৃতি। ওজন এক কিলো থেকে শুরু। সর্ব্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন কিলো পর্যন্ত হয়ে থাকে। বেগুনে বীজ থাকে প্রায় ৫০ গ্রাম। চাষিরা বেগুনের সেই বীজ সারাবছর সংরক্ষণ করে রাখে। মূলত শীতকালেই পাওয়া যায় এই বেগুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post