ফেসবুকের নতুন নিয়ম? ছড়াচ্ছে গুজব ! সতর্ক করলেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা!


নিজস্ব প্রতিনিধি (খবর বাংলা সংবাদ ) :

ফেসবুকের নতুন নিয়ম? সতর্ক করলেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা!

"আগামীকাল থেকে নতুন ফেসবুক নিয়ম (অর্থাৎ নতুন নাম, মেটা) চালু হচ্ছে, যার অধীনে কোম্পানি আপনার ছবিগুলো ব্যবহার করতে পারবে"— সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের একটি মেসেজ ভাইরাল হয়েছে। বহু ব্যবহারকারী নিজের প্রোফাইলে সেই বার্তাটি কপি-পেস্ট করে পোস্ট করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এই বার্তাটি না লিখলে মেটা (ফেসবুকের বর্তমান নাম) আপনার ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য ব্যবহার করতে পারবে। এমনকি বলা হয়েছে, এই পোস্টে উল্লিখিত একটি লিংকে ক্লিক করে ‘ডিক্লেয়ারেশন’ দেওয়াও নাকি অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু এই দাবিগুলি কি আদৌ সত্যি? ফেসবুক কি গোপনে ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে?

খবর বাংলা সংবাদ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিল সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের পোস্ট নিছকই গুজব। ফেসবুক বা মেটা যদি তাদের কোনও পলিসি পরিবর্তন করে, তবে তা অফিসিয়াল ও স্বচ্ছভাবে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ব্যবহারকারীদের কাছে পরিষ্কারভাবে জানানো হয় নতুন শর্তাবলী ও নীতিমালা কী হবে। এমন কোনও গোপন পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

ফেসবুকের অফিশিয়াল নোটিশ, ফিচার, প্রোডাক্ট ও পলিসি সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যায় এই লিংকে:
👉 https://about.fb.com/news/
এই লিংকে খোঁজ করলেই বোঝা যাবে, ভাইরাল হওয়া বার্তার সঙ্গে ফেসবুকের কোনও সম্পর্ক নেই।

সাইবার বিশেষজ্ঞ অভিষেক মিত্র জানান, “আপনি যখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, তখনই আপনি কিছু শর্তে সম্মতি জানিয়েছিলেন। সেখানেই লেখা থাকে আপনার তথ্য, ছবি বা ব্রাউজিং ডেটা কীভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এখনকার যুগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ডিপ-ফেক প্রযুক্তির কারণে সামাজিক মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করার আগে আরও সচেতন হওয়া জরুরি।”

তিনি পরামর্শ দেন—
✅ ফেসবুক প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত যাচাই করুন।
✅ শুধুমাত্র নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে চাইলে সেটিংস অনুযায়ী তা নির্ধারণ করুন।
✅ টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (Two-Factor Authentication) অন রাখুন, যাতে হ্যাকারদের পক্ষে অ্যাকাউন্টে ঢোকা কঠিন হয়।

অন্যদিকে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত সতর্ক করে বলেন, “এ ধরনের পোস্টের সঙ্গে প্রায়ই একটি লিংক থাকে। সেই লিংকে ক্লিক করলে ব্যবহারকারী একটি ভুয়া পেজে রিডাইরেক্ট হয়ে যান। সেখানে ফেসবুক লগইন করার মতো পেজ তৈরি করে রাখা হয়, যা ব্যবহারকারীর আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করতে ব্যবহৃত হয়।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু এই রকম গুজব ছড়ানোর জন্যই নয়, অনেক সময় ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বার্তা ছড়াতেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আপনি কোন কনটেন্টে লাইক বা শেয়ার করছেন, সেটার বিশ্লেষণ করেই বিভিন্ন অসাধু পক্ষ আপনার উপর নজর রাখে। অনেক সময় ভুয়া শপিং অফারের লিংকও একই কৌশলে কাজ করে।”

✅ কী করবেন:

সোশ্যাল মিডিয়ায় অজানা লিংকে ক্লিক করবেন না।

কোনও ভাইরাল মেসেজ কপি-পেস্ট করার আগে তার সত্যতা যাচাই করুন।

ফেসবুক বা মেটার অফিসিয়াল ঘোষণা ছাড়া কোনও গুজবে কান দেবেন না।

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকুন।


স্মরণে রাখা জরুরি, ফেসবুক বা মেটা কোনও নতুন পলিসি চালু করলে তা আপনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে, অ্যাকসেপ্ট বা ডিক্লাইন করার অপশন দেবে। কোনও ফেক পোস্ট বা 'ঘোষণাপত্র' শেয়ার করলেই আপনার তথ্য সুরক্ষিত হয়ে যাবে— এমন ভাবা সম্পূর্ণ ভুল।



প্রতিবেদন: খবর বাংলা সংবাদ



পরামর্শদাতা:
সন্দীপ সেনগুপ্ত (Managing Director, ISOAH Data Securities Pvt. Ltd.)
অভিষেক মিত্র (CEO & Founder, Indian Institute of Cyber Security & Indian Cyber Security Solutions)

Post a Comment

Previous Post Next Post