দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়েরের ৭২ ঘণ্টা পরেও রহস্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। পাঁচ অভিযুক্তকে আসানসোল–দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জট কাটাতে ধৃতদের নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করাবে পুলিশ।
কিন্তু তদন্তের গতিপ্রকৃতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে শাসক–বিরোধী রাজনৈতিক চাপানউতোর। বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্ব এবং বিজেপি শাসিত ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি এর আগেই দুর্গাপুরের ঘটনায় রাজ্যের আইন–শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সোমবার আবার রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করতে আসরে নামেন আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য দিল্লির মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার এই ঘটনায় ধৃত এক অভিযুক্তের তৃণমূল–যোগের অভিযোগও তুলেছেন। পাল্টা উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ–সহ পদ্ম–শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে ধর্ষণ, গণধর্ষণের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূলও। নারী নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা নিয়ে তারা সরাসরি বিঁধেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও।
এর মধ্যে এ দিন দুর্গাপুরের আইকিউ সিটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি জারি করেছেন। রবিবার কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওই নির্যাতিতা তরুণী রাতে সাড়ে ১২টার পরে কী ভাবে হস্টেলের বাইরে বেরোলেন, সে কথাও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা হস্টেলের কোনও বিধি ভাঙেননি এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাঁরা ফেরত এসেছিলেন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সব সময়ে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরে প্রতিটি ক্ষেত্রে মাইক্রো–ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব নয়, সঠিকও নয়।’ কর্তৃপক্ষের এই বিবৃতি আখেরে হস্টেল থেকে ‘রাতে বাইরে না–বেরনো’ সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই করা বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি পুলিশ–প্রশাসনের কাজে তাঁরা সব রকম সহযোগিতা করছেন বলেও দাবি কর্তৃপক্ষের।
এ দিকে, রবিবার মমতার মন্তব্যকে কটাক্ষ ছুড়ে এ দিন বিজেপির তরফে আক্রমণে সামিল করা হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। রেখা গুপ্তা এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘দুর্গাপুরের ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি নিন্দনীয়। এই বিবৃতি ব্যর্থ প্রশাসনের উদাহরণ। জাস্টিস দেওয়ার বদলে মেয়েদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের মাথায় যিনি রয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে নারী সুরক্ষা প্রত্যাশিত, মহিলাদের স্বাধীনতার উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ কাম্য নয়।’