মৃত্যুর সময় হাতের তালুতে সাব-ইন্সপেক্টর গোপাল বদানের নাম লিখে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসক ৷ ঘটনার পর থেকেই তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ ৷ এর মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় সাতারা জেলার ফলটন গ্রামীণ থানায় আত্মসমর্পণ করেন অভিযুক্ত সেই পুলিশ অফিসার ৷ এরপর তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান এসপি তুষার দোষী ৷
এদিন সকালেই পুনে থেকে ঘটনায় অপর অভিযুক্ত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত বানকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ সন্ধ্যায় আত্মসমর্পণ আরেক অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের ৷
গত 23 অক্টোবর রাতে ফল্টন এলাকার হোটেলের একটি ঘরে নিজেকে শেষ করেন 28 বছর বয়সি তরুণী চিকিৎসক ৷ মৃত্যুর সময় হাতের তালুতে সাব-ইন্সপেক্টর গোপাল বদানে এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত বানকারের বিরুদ্ধ তাঁকে ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন মৃত চিকিৎসক ৷ দেহের সঙ্গে, তাঁর লেখা চার পাতার একটি নোটও উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তারপর থেকেই দুই অভিযুক্তকে খুঁজছিল ৷ অবশেষে শনিবার গ্রেফতার দু'জনেই ৷
ঘটনার তদন্তে শনিবার সকালে নির্যাতিতার বাড়ির মালিকের ছেলে প্রশান্ত বানকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ এদিন তাকে সাতারার জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন ৷ এদিকে পলাতক ছিল অপর অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টর গোপাল বদানে ৷ তার খোঁজে তল্লাশি অভিযান আরও জোরদার করা হয় ৷ অবশেষে প্রশান্তর গ্রেফতারির কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ফল্টনের গ্রামীণ থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক ৷ সূত্রের খবর, চার পাতার নোটে নির্যাতিতার অভিযোগ, সাব ইন্সপেক্টর গোপাল বদানে তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ৷ বেশ কয়েকদিন ধরে মানসিক নির্যাতন করেন প্রশান্ত ৷
মৃতের সেই অভিযোগপত্র পাওয়ার পরই দু'জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং চরম পদক্ষেপ করার জন্য প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ এমনকী, বৃহস্পতিবার এই পদক্ষেপ করার আগে অভিযুক্ত প্রশান্তের সঙ্গে চ্যাটে কথাও হয় মৃত তরুণী চিকিৎসকের ৷ এই মুহূর্তে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷ উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে বিডে মৃত তরুণী চিকিৎসকের গ্রামে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় ৷
ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা
উল্লেখ্য, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ রঞ্জিত সিং নায়েক নিম্বালকারের বিরুদ্ধে পূর্বে ওই মৃত তরুণী চিকিৎসকের উপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন শিব সেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) নেতা অম্বদাস দানভে ৷ যদিও বিরোধী নেতার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ৷ তাঁর দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলায় তাঁকে টেনে আনা হচ্ছে ৷ এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই ৷ এদিকে, মৃত চিকিৎসককে হেনস্থাকারী সাংসদকে এই মামলায় দোষী হিসেবে বিবেচনা করার দাবি তুলেছেন বিজেপির বিধায়ক সুরেশ দাশ ৷ তবে কোনও নেতার নাম উল্লেখ করেননি তিনি ৷ তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে ৷
পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ
মৃত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারের অভিযোগ, এই বছরের শুরুতেই সাতারা জেলা প্রশাসনের কাছে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ জানান ৷ তিনি জানান, কাজের জায়গায় আসা যাওয়ার সময় পুলিশ আধিকারিকরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন ৷ এমনকী, তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলারও হুমকি দেওয়া হয় ৷ পাশাপাশি মৃতের দুই আত্মীয় চিকিৎসক অভিযোগ করেন, শাস্তিস্বরূপ তরুণীকে ময়নাতদন্ত বিভাগে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷
পরিবারের বক্তব্য
নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছে, এমডি নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছিলেন তরুণী চিকিৎসক ৷ সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন ৷ তাঁর কাকা জানান, ডাক্তারি পড়ানোর জন্য 3 লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয় ৷ এখনও পর্যন্ত সেই ঋণ শোধ করা হয়নি ৷ তিনি বলেন, "তরুণীর বাবা একজন চাষী ৷ পড়াশোনা জানেন না ৷ আমি একজন শিক্ষক ৷ সেই কারণে আমি স্কুলে নিয়ে যেতাম তাঁকে ৷ এমবিবিএস-এর পরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন ৷ এমডি, ইএনটি কিংবা অন্য কোনও নন-ক্লিনিক্যাল শাখায় পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন ৷"