টেট পাশ না করলে চাকরি থাকবে না প্রাথমিক শিক্ষকদের, এমনই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বার সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে রাজ্য সরকার। উত্তরপ্রদেশ, কেরল আগেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে। যদিও তামিলনাড়ু সরকার তিন দফায় টেট পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে রাজ্য সরকার।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা টেট উত্তীর্ণ নন, তাঁদের আবার পরীক্ষায় বসতে হবে বলে রায় ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত সেপ্টেম্বরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে টেট পাশ হতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আগামী দু’বছরের মধ্যে টেট উত্তীর্ণ হতে না পারলে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। অথবা, চূড়ান্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে ছাড় দেওয়া হয়েছে প্রবীণ শিক্ষকদের। যাঁদের আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অবসর নেওয়ার কথা, তাঁদের টেট উত্তীর্ণ না-হলেও চলবে বলে জানানো হয়েছিল রায়ে।
সম্প্রতি, রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে নবান্নে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল এই রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হোক শীর্ষ আদালতে। তাতেই সম্মতি জানিয়েছে নবান্ন। সরকারের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর আইনজীবীদের মতামত নিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতর রিভিউ পিটিশন বা রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাবে জানাবে সুপ্রিম কোর্টে, জানা গিয়েছে এমনই।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই আতঙ্ক ছড়িয়েছে শিক্ষকমহলে। গত ১৫-২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছে যাঁরা, তাঁরাও এই নির্দেশের আওতায় আসবেন। ফলে অনেকে চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর হলে এ রাজ্যে লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নতুন করে টেট-এ বসতে হবে।
শুধু চাকরি হারানোই নয়। শিক্ষকমহলের দাবি, এই রায় কার্যকর হলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে প্রাথমিকের পঠনপাঠনে। বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন ইতিমধ্যেই এই রায়ের বিরোধিতা করে পথে নেমে আন্দোলন করছে। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “শেষ পর্যন্ত যে রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশন-এর পথে হাঁটছে, সেটাই আশার কথা। কিন্তু আমরা সদর্থক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্রের কাছে লিখিত ভাবে আইন সংশোধনের দাবি জানানো।” কিঙ্করের অভিযোগ, এত বড় একটি বিষয় রাজ্যের সাংসদেরা কোনও ভাবেই সংসদে তুলে ধরছেন না। প্রাথমিক শিক্ষক ও ‘আমরা দ্যা টিচার সোসাইটি’-র আহ্বায়ক পৃথা বিশ্বাস বলেন, “আমি ২০০৬ সাল থেকে প্রাথমিকে শিক্ষকতা করছি। আজ হঠাৎ আবার পরীক্ষা দিতে হবে! শিক্ষকদের অধিকার রক্ষায় রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে না হলে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে।”
এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, তামিলনাড়ু সরকার আগামী বছর জানুয়ারি, জুলাই ও ডিসেম্বরে তিন দফায় টেট পরীক্ষার আয়োজন করতে চলেছে কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য। আবার ওড়িশা ও ত্রিপুরায় এই বিষয়ে আন্দোলনে নামা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার, উঠেছে এমন অভিযোগও।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এ রাজ্যেও তৎপরতা শুরু হয়েছে। গত মাসেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জেলায় জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। কোন জেলায় কত জন শিক্ষককে টেট দিতে হবে, কোন শিক্ষক কবে অবসর নেবেন, কবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন— জেলা কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে ১৫ দিনের।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “কী যে হচ্ছে, আমরা কিছু বুঝতেই পারছি না। চাকরি বাঁচাতে টেট পাশ করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি রাজ্য রিভিউ পিটিশন করেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের নীরবতায় আমরা হতবাক। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু ওড়িশা, ত্রিপুরায় অন্য চিত্র। রাজ্য সরকারেরও উচিত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা।”