পাইলটদের যুক্তি ছিল, অতিরিক্ত ডিউটির ফলে, তাঁরা তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। ককপিটে মনঃসংযোগের ঘাটতি হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে। তাঁদের এই দাবি মেনে নতুন ২২টি ধারা বা ক্লজ় তৈরি করেছিল ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশিন (ডিজিসিএ)। যার মধ্যে ১৫টি ক্লজ় ১ জুলাই থেকে চালু হয়ে গিয়েছে। বাকি সাতটি নিয়ে চলছিল টানাপড়েন। পাইলট সংগঠন এবং এয়ারলাইন্সগুলির মধ্যে আইনি লড়াইও শুরু হয়। নিয়ম শিথিলের জন্য এয়ারলাইন্সগুলির তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছিল। কিন্তু, লাভ হয়নি।
সমস্যা মূলত নাইট ডিউটি নিয়ে। এতদিন নাইটে একটানা ১৩ ঘণ্টা ডিউটি করতে হতো। ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে নাইট ডিউটি হবে ১০ ঘণ্টার। এতে সমস্যা হবে মূলত সেই সব আন্তর্জাতিক রুটে, যেগুলি যাতায়াতে আট ঘণ্টা বা তার থেকেও বেশি সময় লাগে।
দিল্লি–ব্যাঙ্কক ফ্লাইং আওয়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা। রাত বারোটায় ফ্লাইট হলে পাইলটকে আসতে হয় ফ্লাইটের সোওয়া ঘণ্টা আগে, পৌনে এগারোটায়। তখনই তাঁর ডিউটি টাইম চালু হয়ে যায়। ব্যাঙ্ককে ভোর সাড়ে চারটেয় (ভারতীয় সময়) ল্যান্ড করার পরে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তখন জ্বালানি ভরা, যাত্রীদের ওঠানামা, বিমান পরিষ্কার–সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকে। ব্যাঙ্কক থেকে রওনা হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পরে সকাল দশটায় (ভারতীয় সময়) দিল্লি ফেরেন। তার পরেও সোওয়া এক ঘণ্টা লাগে বিভিন্ন অফিশিয়াল কাজে।
এক পাইলটের কথায়, ‘যে ডিউটি আমরা রাত পৌনে এগারোটায় শুরু করছি, সেটা শেষ হচ্ছে পরদিন সকাল সোওয়া এগারোটায়। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১২ ঘণ্টা।’ এর আগে ১৩ ঘণ্টার নিয়ম থাকার সময়ে সমস্যা হয়নি। এ বার?
এয়ারলাইন্সের কর্তারা বলছেন, ‘যে পাইলট এবং এয়ারহস্টেসরা এ বার দিল্লি–ব্যাঙ্কক যাবেন, তাঁরা আর ফিরতে পারবেন না। ধরুন সোমবার রাতে যে ক্রু (পাইলট ও বিমানসেবিকা) ফ্লাইট গিয়ে যাবেন, তাঁরা হোটেলে থেকে মঙ্গলবার রাতের ফ্লাইট নিয়ে ফিরবেন। এ ভাবে প্রতি দিন আমাদের ব্যাঙ্ককের হোটেলে এক সেট ক্রু রেখে দিতে হবে। খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে।’ আশঙ্কা, এই অতিরিক্ত খরচের ভার এসে পড়বে যাত্রীদের উপরেই।
কলকাতা থেকে যে আন্তর্জাতিক উড়ান চলে, নতুন নিয়মে তার আওতায় পড়বে শুধু ইন্ডিগোর হো চি মিন সিটি এবং গুয়াংঝাওয়ের ফ্লাইট। দু’টোরই ফ্লাইং আওয়ার চার ঘণ্টার কাছাকাছি।