রাজনীতি ও ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে, খোলামেলা বক্তব্য রাখার জন্য জাভেদ আখতার বরাবরই পরিচিত। নিজের মত প্রকাশে তিনি কখনও রাখঢাক করেননি। আর সাম্প্রতিক এসওএ সাহিত্য উৎসব ২০২৫-এ তাঁর মন্তব্য আবারও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। উৎসবে বোরখা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাভেদ প্রশ্ন তোলেন, "একজন নারী কেন নিজের মুখ নিয়ে লজ্জা পাবে?" এই মন্তব্যের ভিডিও, নভেম্বরের ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। বিশেষ করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী, নীতীশ কুমারের একটি সাম্প্রতিক বিতর্কিত ঘটনার প্রেক্ষিতে।
উৎসবে এক ছাত্র, জাভেদ আখতারের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে জানতে চান, বোরখা না পরা নারীদের দ্বারা, লালিত-পালিত হয়েও কেন অনেক মহিলা মুখ ঢাকতে চান? এবং মুখ ঢেকে রাখলে কেন একজন নারী কম শক্তিশালী হয়ে পড়েন? এই ধারণার উৎস কোথায়। উত্তরে জাভেদ বলেন, "আপনি আপনার মুখ নিয়ে লজ্জা পাবেন কেন? এমন কী আছে, আপনার মুখে যা অশালীন বা অসম্মানজনক যে সেটি ঢেকে রাখতে হবে?" তিনি স্পষ্ট করে দেন, পোশাকের শালীনতা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক যেমন মর্যাদাপূর্ণ নয়, তেমনি অযৌক্তিকভাবে মুখ ঢেকে রাখাও প্রশ্নের জন্ম দেয়।
বোরখা পরার বিষয়টিকে জাভেদ ‘পিয়ার প্রেসার’-এর ফল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে এটিকে ব্যক্তিগত পছন্দ বলা হলেও, বাস্তবে সামাজিক চাপ ও দীর্ঘদিনের মানসিক প্রভাব কাজ করে। কেউ যদি দাবি করেন, যে তিনি স্বেচ্ছায় এটি করছেন, তাতেও মগজধোলাইয়ের প্রভাব থাকতে পারে। জাভেদের প্রশ্ন, যদি সত্যিই কোনও সামাজিক চাপ না থাকে, তবে কেউ কেন নিজের মুখ ঢাকবে? নিজের চেহারা নিয়ে লজ্জা, ভয় বা ঘৃণাই কি এর কারণ?
এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে, আলোচনায় আসে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের একটি ঘটনা, যেখানে তিনি পাটনায় এক অনুষ্ঠানে, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এক মুসলিম মহিলা চিকিৎসকের, হিজাব সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি ঘিরে বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা শুরু করে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জাভেদ আখতার, এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি বিবৃতি দিয়ে নীতীশ কুমারের আচরণের কড়া নিন্দা করেন। তিনি স্পষ্ট করেন, পর্দা প্রথার তিনি বিরোধী হলেও কোনও নারীর ব্যক্তিগত পছন্দ বা মর্যাদায় হস্তক্ষেপ, সমর্থন করেন না। জাভেদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ওই মহিলা চিকিৎসকের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করেছেন এবং তাঁর উচিত নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।