আলো-আঁধারির মধ্যে মাটিতে পড়ে ছটফট করছেন এক যুবক ৷ হাত জোড় করে প্রাণভিক্ষা চাইছেন তিনি ৷ কিন্তু, উলটোদিকে থাকা চারজনের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত নেই ৷ নির্বিচারে বাঁশ, লাঠি দিয়ে যুবককে পিটিয়ে চলেছেন তাঁদের মধ্যেই দু’জন ৷ পরবর্তীতে মৃত্যু হয় ওই যুবকের ৷ সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে বিজেপি ৷ যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷
ঘটনা বারুইপুর পুরসভার 15 নম্বর ওয়ার্ডের ৷ মৃত যুবক বারুইপুর পশ্চিমের 129 নম্বর বুথের বিজেপির সভাপতি রাজীব বিশ্বাস (22) ৷ গত 8 অগস্ট রাতেই সেই ঘটনায় পুলিশের নোটিশের পর, শনিবার বারুইপুর থানায় বিজেপির তরফে প্রমাণ হিসেবে ভিডিয়োটি জমা করা হয়েছে ৷ উল্লেখ্য, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মৃতের বাবা এবং ছোট ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তবে, যে দু’জন মূলত বিজেপির বুথ সভাপতিকে মারছিলেন তাঁরা এখনও অধরা ৷
বিজেপির অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই রাজীব বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছে ৷ রাজীবের বাবা এবং ভাই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ৷ রাজীব বিজেপি করায় তাঁরাই স্থানীয় দুই তৃণমূল কর্মীর মদতে তাঁকে খুন করিয়েছেন ৷ রাজীবকে মারধরের পর আহত অবস্থায় বাড়িতেই ফেলে রাখা হয়েছিল ৷ পরে 9 অগস্ট তাঁকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷
বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, তৃণমূল শুরু থেকে বিষয়টিকে পারিবারিক বিবাদ বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিল ৷ আর পুলিশ তাতে মদত দিচ্ছিল ৷ তবে, ঘটনার সময় বিজেপি নেতার প্রতিবেশী এক যুবতী মোবাইলে পুরোটা ভিডিয়ো রেকর্ড করেন ৷ গত 11 অগস্ট সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে ৷ পরবর্তীতে 19 অগস্ট বিজেপির তরফে আদালতে ভিডিয়োটি সম্পর্কে জানানো হয় ৷ তারপরেই 23 অগস্ট পুলিশ ওই যুবতীকে ভিডিয়োটি থানায় জমা করতে বলে নোটিশ পাঠায় ৷
সেই মতো শনিবার সন্ধেবেলা স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এবং আইনজীবী থানায় গিয়ে ভিডিয়োটি প্রমাণ হিসেবে জমা করেছে ৷ এ নিয়ে আইনজীবী তথা বারুইপুর পশ্চিমের বিজেপির এক নম্বর মণ্ডলের সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী বলেন, "বিজেপি করায় 129 নম্বর বুথের সভাপতি রাজীব বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছে ৷ ওঁর বাবা এবং দাদাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৷ তবে, ভিডিয়োতে বাকি যে দু’জন রয়েছেন, তাঁরাও তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ৷ তবে, পুলিশ এখনও তাঁদের গ্রেফতার করেনি ৷ তৃণমূল বিষয়টিকে পারিবারিক বিবাদ বলে চেপে দেওয়ার চেষ্টা করছিল ৷"
তিনি আরও বলেন, "আমরা গত 19 তারিখ আদালতে ভিডিয়োর বিষয়টি জানাই ৷ তারপর 23 অগস্ট আমার মক্কেলকে নোটিশ পাঠায় পুলিশ, ভিডিয়োটা জমা দিতে ৷ সেই মতো আজকে আমরা এসে ভিডিয়োটা প্রমাণ হিসেবে জমা দিলাম ৷ তার একটা রিসিভ কপি নিয়েছি ৷ আগামিকাল তদন্তকারী অফিসার এই রিসিভ কপিতে স্টাম্প করিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন ৷ তিনি আজকে নেই ৷"
অন্যদিকে, বারুইপুর পুরসভার 15 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অর্চনা মল্লিক দাবি করেছেন, "এই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও যোগ নেই ৷ এটা পারিবারিক বিবাদে ৷ আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন, তাই বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে ৷ আর মৃত যুবকের বাবা ও ভাই আমাদের দলের সঙ্গ যুক্ত নন ৷ ভিডিয়োতে যে দু’জনকে দেখা গিয়েছে, তাঁদেরও কোনও দিন আমাদের দলের সঙ্গে দেখিনি ৷ তাঁরা এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাও নন ৷"
অন্যদিকে, বিজেপির বুথ সভাপতির খুনের ঘটনায় বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, "এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই মৃতের বাবা ও ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এর পাশাপাশি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে ৷"