৩ দিন রাতভর বন্ধ গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু, ভোগান্তি এড়াতে জানুন বিশদে


সোমবার থেকে তিনদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত আরামবাগের রামকৃষ্ণ সেতু বন্ধ করে মেরামতির কাজ চলবে। শনিবারই হুগলি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মর্মে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনও যান চলাচল করবে না। উল্লেখ করা যেতে পারে হুগলি থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর যাওয়ার প্রধান সড়ক পথের মধ্যে দ্বারকেশ্বর নদের ওপর এই সেতুটিই মধ্যস্থতা করে সংযোগকারী হিসেবে। 

অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই এই সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেতুটির গার্ড ওয়ালের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। বিকল্প সেতুরও দাবি উঠেছে। দিন ১৫ আগে একদিন রাতে হঠাৎই ভেঙে পড়ে আরামবাগের রামকৃষ্ণ সেতুর ফুটপাত-সহ গার্ডওয়ালের একাংশ। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ালেও কেউ হতাহত হননি। 

সেতুর গার্ডওয়ালের একাংশ ভাঙার পরেই পুলিশ ভাঙা অংশে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে এবং জরুরি মাইকিং চালায়। পাশাপাশি সেতুতে ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন রাজ্য ও জেলা স্তরের পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা। 

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধুমাত্র ২ চাকা এবং চার চাকা গাড়ি চলবে। বাস লরি চলবে না। পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য বাস মালিক রা স্থির করেন তাঁরা কাটা সার্ভিস চালাবেন। অর্থাৎ একটি বাস এপারে থামবে, কানেকটিং বাস সেতুর অপর অপর পারে থাকবে। নাহলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এর কয়েকশো দূরপাল্লার বাস আর যেতে পারবে না।

কিন্তু ৩২৫ মিটার লম্বা সেতু তো হেঁটে পার হওয়া কঠিন। আরামবাগ পুরসভা থেকে ১০টি টোটো এবং পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষের পক্ষ থেকে ৫ টি টোটো নিখরচায় যাত্রী বহন করার জন্য দেওয়া হয়। ওই ১৫ টি টোটো বর্তমানে যাত্রীদের সেতুর এপার ওপার করাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে তৈরি প্রায় ৩২৫ মিটার লম্বা ও ৭ মিটার চওড়া এই সেতুর বয়স এখন ৬০ বছরের কাছাকাছি, যা সাধারণ সেতুর গড় আয়ুর তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৮ সালেই এটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এই সেতুটি কলকাতা ও বর্ধমানের সঙ্গে হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম। জানা গেছে, প্রতিদিন এর ওপর দিয়ে প্রায় ৬ হাজার ভারী যানসহ মোট ১০ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলাচল করে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই সেতুর বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—কখনও পাটাতন বসে যাচ্ছে, কখনও স্ল্যাব ফাঁক হয়ে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হচ্ছে। যদি সেতুটি অকেজো হয়ে যায়, তবে আরামবাগ থেকে যাতায়াতের জন্য প্রায় ৩৬ কিমি ঘুরে বর্ধমানের উচালন সংলগ্ন একলক্ষ্মী হয়ে যাতায়াত করতে হবে। বর্তমানে ভারী পণ্য পরিবহণ সেই রুটেই যাচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post