‘কোনও আত্মমর্যাদাশীল দেশ চাপের কাছে মাথা নত করে না’, পুতিনের হুঙ্কার ট্রাম্পের বুকে কাঁপুনি ধরালো


রাশিয়ার উপর নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানি — রোসনেফ্ট এবং লুকোয়েল — এর উপর মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। ‘কোনও আত্মমর্যাদাশীল দেশ চাপের কাছে মাথা নত করে না’, এমনই মন্তব্যে ট্রাম্পের বুকে কাঁপুনি ধরালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মার্কিন এই পদক্ষেপকে “চাপ প্রয়োগের চেষ্টা” হিসেবে দেখছে মস্কো।

গতকালই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই পদক্ষেপের “প্রতিকূল প্রভাব” পড়বে এবং এতে রাশিয়ার তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতিরই বেশি ক্ষতি হবে।

জাখারোভা সতর্ক করে বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর হবে না। আমেরিকার এই পদক্ষেপ রাশিয়াকে তার জাতীয় স্বার্থ থেকে এক ইঞ্চিও সরাতে পারবে না।” তিনি আরও জানান, রাশিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে আলোচনার মাধ্যম হওয়া উচিত কূটনৈতিক পদক্ষেপ, মিডিয়া বিবৃতি নয়। তাঁর কথায়, “এই পদক্ষেপের বিপরীত প্রভাব পড়বে এবং ইউক্রেন সংঘাতের সমাধানে যে কোনও অর্থবহ আলোচনা আরও জটিল হয়ে উঠবে।” রুশ মুখপাত্র আরও বলেন, পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাশিয়া ইতিমধ্যেই একটি দৃঢ় প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং দেশটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক ও জ্বালানি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এদিকে, চিনও বৃহস্পতিবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বেজিং জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ “একতরফা” এবং এর “কোনও আন্তর্জাতিক আইনি ভিত্তি নেই।” চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, “চিন ইউক্রেন সংকটের স্রষ্টা নয়, সমর্থকও নয়। আমরা চিনা কোম্পানিগুলির বৈধ স্বার্থের ক্ষতি করে এমন সব পদক্ষেপের বিরোধিতা করি।”

চিন আরও জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বলপ্রয়োগের বদলে সংলাপ ও সহযোগিতার পথে এগোনো। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও চিনের এই যৌথ প্রতিক্রিয়া ক্রমবর্ধমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ফ্রন্ট তৈরি করতে পারে। উভয় দেশই ইতিমধ্যেই ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং বিকল্প বাণিজ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া-চিনের মধ্যে শক্তি ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও জোরদার হলে তা পশ্চিমী অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিশ্ব জুড়ে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

এদিকে মার্কিন পদক্ষেপের পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন উল্লেখ করেছেন, তিনি ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়ে দিয়েছেন যে এই পদক্ষেপের প্রভাব শুধু রাশিয়ার উপর নয়, বিশ্বব্যাপী তেলের দামের ওপরও পড়বে। তিনি বলেন, "এই সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের তেলের বাজারকে প্রভাবিত করবে।" নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতিমধ্যেই তেলের বাজারে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং জ্বালানি আমদানিকারক দেশ ভারতও রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ক্রয় কমাতে শুরু করেছে। পুতিনের এই মন্তব্য রাশিয়ার অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছে, যেখানে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক চাপের বিরুদ্ধে অটল থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post