‘প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে’! মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি ‘আত্মসাতের’ অভিযোগ, আঙুল তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে


মোটা অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় আসানসোলের রাজনীতি।

আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’ পুলিশের আর এক কর্তা জানান, বিনিয়োগকারীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিন আহমেদের বিরুদ্ধে। শাসক তৃণমূলের অবশ্য দাবি, শাকিলের সঙ্গে এই মুহূর্তে দলের কোনও যোগাযোগ নেই। দলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি মেহফুজুল হাসানের কথায়, ‘‘অভিযুক্ত তহসিন আহমেদের বাবা শাকিল আহমেদের সঙ্গে এখন দলের কোনও যোগাযোগ নেই। আগে উনি সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে উনি দলের কেউ নন।’’

বাম আমলে ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন শাকিল। কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদেও ছিলেন। ছেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ। ফোন বন্ধ তহসিনেরও।

আসানসোলের রেলপাড়ার জাহাঙ্গির মহল্লার একাধিক বাসিন্দা তহসিনের বিরুদ্ধে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বেশি রিটার্নের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করেছেন তহসিন। মাসে মাসে মোটা অঙ্কের সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রথমে দিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হলেও, পরে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর টাকা ফেরতের দাবিতে বুধবার তহসিনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীদের একাংশ।

অবসরপ্রাপ্ত এক বিএসএফ অফিসার বলেন, ‘‘প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। ভাল রিটার্ন পেয়ে আরও টাকা বিনিয়োগ করি। সব মিলিয়ে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আর কোনও টাকা পাচ্ছি না। অনেকেই আমার কথা শুনে এই প্রকল্পে টাকা দিয়েছিলেন। এখন সকলেরই টাকা আটকে গিয়েছে। আমাদের ধারণা, প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে।” ওই বিএসএফ অফিসারের দাবি, মোট সাত জন জড়িত। প্রায় আড়াই হাজার বিনিয়োগকারী প্রতারিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দেখাও করেছেন। বিএসএফ অফিসারের দাবি, মন্ত্রী বলেছেন, প্রশাসন আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেবে।

একই ভাবে, মহিশীলা কলোনির বটতলা এলাকার বাসিন্দা মৌটুসি দত্ত বলেন, ‘‘আমি বেকার। সোনার গয়না বন্ধক রেখে ২০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। কয়েক মাস সুদ পেয়েছিলাম। তার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এখন টাকা চাইতে গেলে ধাক্কাধাক্কি করা হচ্ছে। আমি আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করি।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তহসিন আহমেদ এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post