‘আসছে বছর আবার হবে, বছর বছর আবার হবে’। চোখের কোণায় জল ভক্তদের, কারণ এ বছরের মতো বিদায় জানানোর পালা মাকে। শুক্রবার ছিল নৈহাটির বড়মার বিসর্জন। এ দিন বড়মাকে দর্শন করতে ভক্তের ভিড় যেন আরও বেশি ছিল। মন্দিরেই শুধু নয়, বিসর্জনের শোভাযাত্রায়ও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। গঙ্গায় রাজবেশে যখন বড়মার নিরঞ্জন হচ্ছে তখন ভক্তদের মুখে উচ্চারিত চেনাবুলি ‘ধর্ম যার যার, বড়মা সবার...’।
সাধারণ ভক্ত থেকে সেলিব্রিটি, সকলেই সমান বড়মার কাছে। ২১ ফুটের এই মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে মা কখনই খালি হাতে ফেরান না তাঁর ভক্তদের। অন্তত বিশ্বাস এমনই।
উদ্যোক্তাদের মতে, বড়মার দু চোখের দিকে তাকালেই যে কোনও মানুষ কেঁদে ফেলতে বাধ্য। এক অদ্ভুত শক্তি কাজ করে মায়ের সামনে দাঁড়ালে।
প্রতিবছর বহু মানুষ মায়ের সামনে হাজির হন দণ্ডি কেটে। চলতি বছরেও দূরের গ্রাম গুলি থেকে দণ্ডি কেটে আসেন বহু ভক্ত। ২৩ অক্টোবরও নিত্য পুজো চলে মায়ের। সকালের পুজো শেষে শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি। বিতরণ করা হয় প্রসাদও।
২৪ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার মায়ের নিরঞ্জনের পালা। সকাল ৭টায় শুরু হয় বড়মা কালী নিরঞ্জন পুজো। দেওয়া হয় দধিকর্মা। বিকেল ৪ টে নাগাদ শুরু হয় শোভাযাত্রা।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মাকে সাজানো হয় রাজবেশে। ১০০ কেজির বেশি সোনার গয়না খুলে পরানো হয় ফুলের গয়না।
নিরঞ্জনের আগে নৈহাটিতে ‘বড়মা ফেরিঘাট’ থেকে মুক্ত করা হয় একাধিক পায়রাকে। মানসিক করে কেউ কেউ এমন পায়রা, পাঁঠা নিয়ে আসেন। কিন্তু বলি হয় না এই পুজোয়। তাই তা উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই রীতি যদিও নতুন নয়।
কালীপুজোর দিন থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত নৈহাটির অরবিন্দ রোড ঘিরে ছিলেন বহু পুলিশ কর্মী। ভক্তরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে মায়ের দর্শন করতে পারেন, কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তা নিয়ে সদা সজাগ ছিল ব্যারাকপুর পুলিশ।
প্রতিমা নিরঞ্জনের দিনেও প্রায় ৭০ জন আইপিএস অফিসার এবং ডিসিপি-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে প্রায় সাতশোর অধিক পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল বড়মা নিরঞ্জন ঘিরে।
অন্যদিকে গঙ্গায় বড়মার বিসর্জন দেখতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ঢল নামে। কেউ আসেন লঞ্চ ভাড়া করে আবার কেউ নৌকো ভাড়া করেও এসেছিলেন। আবারও অপেক্ষা ৩৬৫ দিনের। যদিও মন্দিরের ভিতর রয়েছে ছোট কষ্টি পাথরের বড়মা তাঁকে ঘিরেই সারাবছর চলে পুজো। সেখানেও বছরের প্রতিটা দিনেই লক্ষ্য করা যায় ভক্তদের ভিড়।