পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি পথ দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট কমিটি অন রোড সেফটি। ১৮ অগস্ট নবান্নে মুখ্যসচিবকে লেখা ওই চিঠিটি পাঠিয়েছেন কমিটির সেক্রেটারি সঞ্জয় মিতাল। প্রাক্তন বিচারপতি অভয় মনোহর সাপ্রের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে পথ দুর্ঘটনা কমাতে এবং ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য প্রশাসন কী পদক্ষেপ করেছে, তা বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠানো হোক কমিটির কাছে।
উল্লেখ্য, ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন সাতসকালে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা ঘটে বর্ধমানে। লরির সঙ্গে ধাক্কায় মৃত্যু হয় বাসের ১০ যাত্রীর। আহত হন ৩৫ জন। পূর্ব বর্ধমানে জাতীয় সড়কের নলা ফেরিঘাট এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে যাত্রিবোঝাই বাসটি। দুর্গাপুরের দিকে যাওয়ার পথে ওই বেসরকারি যাত্রিবাহী বাস একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ট্রাকটি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়েছিল। বাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোতেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাসযাত্রীরা সকলেই বিহারের বাসিন্দা ছিলেন। বিহারের মতিয়ার থানা এলাকার চিরাইয়া সারসওয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা তাঁরা। গঙ্গাসাগরে স্নান করতে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন তারা। স্নানশেষে বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে। বাসে মোট ৫ জন শিশু-সহ ৪৫ জন যাত্রী ছিলেন। পুলিশের অনুমান, চালক ঘুমিয়ে পড়াতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
সেই ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসন ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সঙ্গে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেই বা কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটি তা জানতে চেয়েছে মুখ্যসচিবের কাছে। এই চিঠি আসার পরেই তৎপরতা শুরু হয়েছে নবান্নে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট পাঠাতে চায় রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই চিঠির জবাব দিতে মুখ্যসচিবের অফিস কথা বলেছে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে। তার পরেই সোমবার পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব কাঞ্চন চৌধুরী চিঠি লিখে পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক আয়েষা রানির কাছে এই দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। সঙ্গে এই ঘটনার পর বেপরোয়া যানের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা সুষ্ঠু করতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। ৩১ অগস্টের মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে আমাদের কাছে ওই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে পদক্ষেপ-সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়েছি। সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা আমাদের বিষয়টি যুক্ত করে তা নবান্নে পাঠিয়ে দেব।’’