ওই বৈঠকগুলিতে নিচুতলার নেতা–কর্মীরা যে মতামত দিয়েছেন তা পর্যালোচনা করে নন্দীগ্রাম–১ এবং নন্দীগ্রাম–২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি, শাখা সংগঠনের পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘাঁটি নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন অভিষেক।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ব্লক–টাউন স্তরে দলীয় সভাপতি, সহ সভাপতি, শাখা সংগঠনের নেতৃত্বের নাম ঘোষিত হলেও নন্দীগ্রামের দুটি ব্লকের রদবদল করা হয়নি। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার রদবদল করার আগে স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন অভিষেক। সেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম নিয়ে পৃথক বৈঠক করবেন।
জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘নন্দীগ্রামের বাছাই করা নেতা–কর্মীদের একসঙ্গে না ডেকে তাঁদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে বৈঠক করেছেন অভিষেক। অনেকগুলি ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটি অঞ্চলে কী কী সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে, তা তিনি শুনেছেন। কোথায় ফাঁকফোঁকর কিংবা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন।’ রাজ্যের কোনও বিধানসভা কেন্দ্রের সংগঠন নিয়ে এ ভাবে মাইক্রো লেভেলে সাংগঠনিক পর্যালোচনা অভিষেক করেননি বলে তৃণমূল নেতাদের পর্যবেক্ষণ।
তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দৃঢ় বিশ্বাস ২০২১ এর নির্বাচনে নন্দীগ্রামে দলের কোনও কোনও নেতা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করলে ফলাফল অন্য হতো। ২০২৪ এর লোকসভা ভোটের বিশ্লেষণ তৃণমূল নেতৃত্ব করেছে। সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, দেবাংশু ভট্টাচার্য হেভিওয়েট প্রার্থী না হওয়া সত্ত্বেও বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে মাত্র ৮২০০ ভোটের লিড পেয়েছিলেন। প্রাপ্ত ভোট শতাংশের নিরিখে পদ্মফুল পেয়েছে ৪৯ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট, জোড়াফুল পেয়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোট।
তমলুক লোকসভার সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৭৫৭৪ টি ভোট। যা মোট ভোটের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৭.৬৪ শতাংশ, শুভেন্দুর ভোট ছিল ৪৮.৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে, সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ২.৭৪ শতাংশ ভোট।
২০২৪–এর ভোটে ওজনদার প্রার্থী না থাকা সত্ত্বেও বিজেপি ৮২০০–র বেশি লিড নিতে না পারায় তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে ২০২৬–এর নির্বাচনে নির্দিষ্ট রণকৌশল নিয়ে এগোলে নন্দীগ্রামের রঙ বদল অসম্ভব নয়। এই বিধানসভার নিচুতলার নেতা–কর্মীদের নিয়ে অভিষেক পরপর যে বৈঠক করেছেন তা নন্দীগ্রামের ২৮৬ টি বুথে দলীয় ভোট প্রক্রিয়ায় মাইক্রো ম্যানেজমেন্টের সমতুল।
শুভেন্দু নিজেও নন্দীগ্রামের দুর্গ আরও শক্তপোক্ত করতে নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। পদ্ম শিবিরের রাজ্য নেতৃত্ব ২০২৪–এর ভোটের কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে দেখেছেন, মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে হিন্দু ভোটের প্রায় ৭৫ শতাংশ মেরুকরণ হয়েছিল। যা রাজ্যের মধ্যে সবথেকে বেশি। অন্যদিকে, সেই নির্বাচনেই নন্দীগ্রাম বিধানসভায় হিন্দু ভোটের ৭৩ শতাংশ মেরুকরণ হয়েছিল। যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মেরুকরণ বলে বিজেপির বিশ্লেষণ।
সংখ্যালঘু এলাকার বাইরে নন্দীগ্রামে বুথ স্তরে বিজেপি–র শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। শুভেন্দু যদি নন্দীগ্রামে ৭৫ শতাংশের বেশি মেরুকরণ করতে পারেন তা হলে পদ্মফুল মার্জিন বাড়িয়ে জয়ী হবে বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। যুযুধান দু’পক্ষের এই লড়াইয়ের মধ্যে সিপিএমের ঝুলিতে থাকা ৬–৭ হাজার ভোট অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে রয়েছে। এই ভোট যদি আরও বাড়ে তার প্রভাব পড়বে ফলাফলে। এই ভোট যদি কোনও ফুলের দিকে সুইং করে তারও প্রভাব ফলাফলে পড়বে বলে ভোট বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ।