ইডি'র তল্লাশির মাঝে বীরভূমের বালি পাচার নিয়ে বিস্ফোরক সরকারি পরিসংখ্যান


বালি পাচার নিয়ে বুধবার রাজ্যজুড়ে ইডি'র তল্লাশির মাঝে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য ৷ বীরভূমে বেআইনি বালির কারবারে তুলে ধরা হল সরকারি পরিসংখ্যান ৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই জেলায় সব থেকে বেশি বালির কারবার হয় মহম্মদবাজার, ইলামবাজার, সিউড়ি, দুবরাজপুর, রামপুরহাটে ৷ অথচ পরিসংখ্যানে উল্লেখ নেই নানুর, লাভপুর ও কোপাই নদী থেকে দেদার বালি লুঠের কোন তথ্য বা মামলার কথা ৷

এদিন সকালে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের বাড়ি ও অফিসে একসঙ্গে অভিযান শুরু করে ইডি । যার মধ্যে রয়েছে আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও কলকাতা । এদিন বীরভূমে ইডি হানা না-দিলেও এই জেলায় বিভিন্ন জায়গায় বালি পাচার নিয়ে সামনে এল বিস্ফোরক সরকারি তথ্য ৷

মাসদুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী ধমকের পর রাতের অন্ধকারে নানুরের বালিরঘাটে হানা দিতে দেখা গিয়েছিল বীরভূম জেলা শাসককে ৷ সে সময় 15টি ডাম্পার ও চারটি বালি তোলার মেশিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল ৷ কিন্তু বালিবোঝাই ট্রাক আটক করে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে বীরভূম পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ এই প্রসঙ্গে যদিও, বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, "2024-24 সাল থেকে 2025 সালে বেআইনি বালি পাচার রুখতে অনেক বেশি সক্রিয় পুলিশ। ব্লক লেভেল সারভাইলেন্স টিম অনেক বেশি সতর্ক ৷ বালির বেআইনি কারবার রুখতে পুলিশ তৎপর।"

বীরভূম জেলায় বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ নতুন কিছু নয় ৷ জেলার অজয়, ময়ূরাক্ষী, দ্বারকা, ব্রাহ্মণী, বক্রেশ্বর, হিংলো, শাল, কোপাই প্রভৃতি নদ-নদী থেকে দেদার বেআইনিভাবে বালি তুলে পাচার করার অভিযোগ ভুরি ভুরি। ইতিমধ্যেই রাজ্যে বেআইনি বালি পাচার নিয়ে সক্রিয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । এদিন সকাল থেকে রাজ্যের 8 জায়গায় ইডি'র প্রায় 40 জন তদন্তকারী অফিসার ভাগ হয়ে গিয়ে একযোগে হানা দেন ৷

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2023 সালে বীরভূম জেলায় বেআইনি বালির কারবার নিয়ে মোট 245টি মামলা রুজু হয়েছে ৷ 254 জন কারবারি ও তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বীরভূম পুলিশ ৷ পাশাপাশি 443টি বালিবোঝাই ট্রাক, লরি, ডাম্পার আটক করা হয়েছে বলেও তুলে ধরা হয়েছে সরকারি পরিসংখ্য়ানে।

আর 2024 সালে বেশ কিছুটা সক্রিয় হয়ে বীরভূম জেলা বেআইনি বালি কারবার সংক্রান্ত 357টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে 229 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি 666টি বালিবোঝাই ট্রাক, ডাম্পার ও লরি আটক করেছে পুলিশ ৷

বেআইনি বালি পাচার নিয়ে ইডি'র তদন্ত শুরু ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর বীরভূমে বেআইনি বালি কারবার রুখতে সক্রিয় হয় পুলিশ ও প্রশাসন। 2025 সালের শুরু থেকে 30 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেআইনি বালির কারবার সংক্রান্ত 928টি মামলা রুজু হয়েছে ও কারবারের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে 727 জনকে গ্রেফতার করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ ৷ পাশাপাশি, এক হাজার 506টি বেআইনি বালিবোঝাই ট্রাক, লরি, ডাম্পার আটক করেছে পুলিশ ৷

পরিসংখ্যান থেকে আরও পাওয়া যাচ্ছে, এই জেলায় সব থেকে বেশি বালির কারবার হয় মহম্মদবাজার, সিউড়ি, দুবরাজপুর, ইলামবাজার, রামপুরহাট থানা এলাকায় ৷ যদিও, দেদার বালি লুঠ চলছে নানুরের অজয় নদ, লাভপুর দ্বারকা নদ ও শান্তিনিকেতনের কোপাই নদী থেকে । সেই থানা এলাকা গুলিতে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতার কোন পরিসংখ্যান অবশ্য মেলেনি ৷ তবে এই পরিসংখ্যান থেকে কার্যত স্পষ্ট, কীভাবে দিনের পর দিন বীরভূম জেলাজুড়ে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বালির কারবার ও বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য।

উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়কে ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূম জেলায় বেআইনি বালির কারবার রোখার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই দেখা গিয়েছিল রাতের অন্ধকারে নানুর থানা এলাকায় অজয় নদের বালির ঘাটগুলিতে হানা দিয়েছিলেন জেলাশাসক ৷ আটক করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি ডাম্পার-সহ নদী গর্ভ থেকে বালি তোলার যন্ত্রাংশ।

অন্যদিকে, সদ্য বালিবোঝাই ট্রাক আটক করে তোলাবাজির অভিযোগ বীরভূম পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন জেলা ট্রাক মালিক সমিতি সভাপতি। পুলিশ অফিসারের টাকা গোনার ভিডিয়ো পর্যন্ত প্রকাশ করেছিল এই সংগঠন। তারপরেই মহম্মদবাজার থানার দুই অফিসারকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং।

Post a Comment

Previous Post Next Post