বিপর্যয় পেরিয়ে উত্তরবঙ্গে ট্রেনে ফের টিকিটের আকাল বড়দিনে


দুর্গাপুজোর সময়ে প্রতি বছর যা ঘটে, ঠিক তেমনই ঘটল বড়দিনের ছুটিতে। দূরপাল্লার ট্রেনের বুকিং উইন্ডো খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার সব ক’টি ট্রেনেই টিকিট ‘বাড়ন্ত’। হিমালয় ও ডুয়ার্সের অপার সৌন্দর্যের অমোঘ আকর্ষণ সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আতঙ্ককে অতিক্রম করে গে‍ল।

দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এবং অবশ্যই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস — হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার সব ক’টি ট্রেনের অবস্থা একই। টিকিট নেই। এর মধ্যে কোনও কোনও ট্রেনে সোমবার বিকেলেও টিকিট কাটতে গেলে ওয়েটিং লিস্টে ১৬০ বা ১৭০ জনের পিছনে থাকতে হচ্ছিল। তবে দার্জিলিং মেল ও পদাতিক এক্সপ্রেসের মতো উত্তরবঙ্গ যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দু’টি ট্রেনেরই পরিস্থিতি এমন যে সেখানে আর অনলাইনে টিকিট কাটার উপায়ই নেই। ওয়েটিং লিস্ট ৩৯৯–এ পৌঁছে গেলে ভারতীয় রেলের কম্পিউটার রিজ়ার্ভেশন সিস্টেম আর টিকিট কাটতেই দেয় না। ‘রিগ্রেট’ লেখা দেখিয়ে দেয়। দার্জিলিং মেল ও পদাতিক এক্সপ্রেসে এখন এমনই পরিস্থিতি।

বড়দিনের ছুটিটা হিমালয়ের কোলে কনকনে শীত উপভোগ করতে করতে কাটাবেন, এমন পরিকল্পনা যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই কনফার্মড টিকিট না পেয়ে হতাশ। তবে বুকিং উইন্ডো খোলার পরেই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় আনন্দিত পর্যটন–ব্যবসায়ীরা। ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’–এর পক্ষ থেকে সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই যে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছিল, তার পরে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, এ বার হয়তো শীতে পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম থাকবে। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম, যাঁরা বেড়াতে ভালোবাসেন, তাঁরা উত্তরবঙ্গকে এড়িয়ে গেলেন না। তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

ট্রেনের বুকিং উইন্ডো খোলার সঙ্গে সঙ্গে এমন ভাবে সব টিকিট বিক্রি হওয়ার ঘটনায় উৎফুল্ল রাজ্য ইকো ট্যুরিজ়ম বোর্ডের রাজ বসুও। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও কোনও বুকিং হয়নি। তার পর হঠাৎ করেই যেন বুকিংয়ের ঝড় উঠল। গত তিন দিনে বিপুল বুকিং এসেছে। আমরা বলতে পারি, মোট প্রপার্টির প্রায় ৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে তিন দিনে।’ পর্যটনব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই কালিম্পংয়ের পুডুং পর্যটকদের নজর কেড়েছে। একই সঙ্গে চুইখিমে প্যারাগ্লাইডিং এবং ইয়েলবংয়ে রিভার র‌্যাফটিং নিয়েও অনেকে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন। লাচেন বাদে সিকিমেরও সব ক’টি রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই দিকেও পর্যটনে জোয়ার আসতে চলেছে বলে আশা করাই যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post