লকডাউনেও চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র! SSC মামলায় পার্থর সামনেই চাঞ্চল্যকর বয়ান সাক্ষীর


এসএসসি মামলায় চাঞ্চল্যকর মোড়। চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয় লকডাউনের সময়েও। আর তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন কল‌্যাণময় গঙ্গোপাধ‌্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিংহ। আরটিআইয়ের ‘নাম করে’ ওই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের সিবিআইয়ের মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অভিযুক্তদের বিচারপর্ব চলছে। আর তা চলাকালীন এক সাক্ষীর বয়ানে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
 সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারপর্বে দ্বিতীয় দফায় মাধ‌্যমিক বোর্ডের এক টেকনিক‌্যাল অফিসারের সাক্ষ‌্যগ্রহণ হয়। এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতির তিনটি মামলায় এই সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। যেহেতু সিবিআইয়ের তিন মামলার তদন্তকারী আধিকারিকরা নিজেরাও মামলার সাক্ষী, তাই সাক্ষ‌্যগ্রহণের সময় তাঁদের আদালত কক্ষে থাকার অনুমতি দেয়নি আদালত। অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জেলমুক্তি নিয়ে চলছে জোর জল্পনা। যদিও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জেলমুক্তি হতে আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পরেই। যদিও এখনও পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
এদিকে, হাই কোর্টে ইডির মামলায় জামিনের পাঁচ লাখ টাকার বন্ড এদিনই ইডির বিশেষ আদালতে পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়ের পক্ষে জমা দেওয়া হয়। এদিন পার্থ চট্টোপাধ‌্যায় চশমা ছাড়াই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজিরা দেন। কল‌্যাণময় গঙ্গোপাধ‌্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিংহ, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, প্রসন্ন রায়, চন্দন মণ্ডল হাজিরা দেন প্রেসিডেন্সি জেলে বসেই।

এদিন ওই সাক্ষী সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আদালতে জানান, ”কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়াটাই তাঁর কাজ ছিল। পাঁচ থেকে ৬ হাজার নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। হার্ড কপির ভিত্তিতে তৈরি করা হতো সফট কপি।” ওই ব্যক্তির কথায়, ”বোর্ডের সভাপতি অথবা নিয়োগ সেলের কাছ থেকে নিয়োগের নির্দেশ আসত। নিয়োগপত্র চেয়ারম‌্যান ইস্যু করতেন। প্রথমে বোর্ডের সভাপতি ছিলেন ড. পারমিতা রায়। পরে হন কল‌্যাণময় গঙ্গোপাধ‌্যায়। নিয়োগপত্রে তাঁদের স্ক‌্যান করা সই দেওয়া হত। এর পর সেই ফাইল অনুমোদন করতেন কল‌্যাণময়। একটি নোটশিটে সব নাম থাকত। বোর্ডের ওয়েবসাইটে নোটিফিকেশন করা হত। চাকরিপ্রার্থীরা তা দেখে চাকরির ব‌্যাপারটি জানতে পারতেন।”

এই প্রসঙ্গে ওই সাক্ষী এদিন আদালতে আরও জানান, ”লকডাউন চলাকালীন একদিন তাঁকে কল‌্যাণময়ের ঘরে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে ছিলেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম‌্যান শান্তিপ্রসাদ সিংহ।” তাঁর দাবি, সেদিন তাঁকে বলা হয়, আরটিআইয়ের ব‌্যাপার আছে। তাই কিছু নিয়োগপত্র আগে দিতে হবে। আরটিআইয়ে কিছু নম্বর বেরিয়েছে। এটি হাই প্রোফাইল বিষয়। তাই নিয়োগপত্র না দিলে সমস‌্যা হবে। কীভাবে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনাও হয়। নতুন বিল্ডিং থেকে যাতে দেওয়া যায়, সেই ব‌্যবস্থাও করতে হবে। কল‌্যাণময় সাক্ষীকে বলেন, সমরজিৎ আচার্যর কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে। কিন্তু লকডাউনে কর্মীর অভাব। তাই তিনি নতুন বিল্ডিংয়ে দিয়ে আসেন সেই নিয়োগপত্রগুলি। সেগুলি চারজন কর্মী, যাঁদের মধ্যে দু’জনের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন, সেই নিয়োগপত্রগুলি বিলি করেন। তবে সাক্ষী জানান, তিনি নিয়োগপত্রগুলি যাচাই করেননি। কারণ, সেই কাজ তাঁদের নয়। এই কাজ নিয়োগ কর্তৃপক্ষের। মঙ্গলবার ও বুধবার আরও দু’জনের সাক্ষ‌্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।



Post a Comment

Previous Post Next Post